মাতালগুচ্ছ/আদিত্য আনাম/ পাঠ-প্রতিক্রিয়া/শামীমা রিতু

 'মাতালগুচ্ছ' নিয়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়ার শামীমা রিতু




অক্টোবর শেষের দিকে, শরৎ-ও চলে যাচ্ছে। কুয়াশা জানান দিচ্ছে আসছে হেমন্ত। শিউলি ঝরা সকালগুলো তুলে ধরছে বাংলার চিরায়ত রূপকে।সুপার সাইক্লোন 'সিত্রাং' তাণ্ডবনৃত্য থামিয়ে চলে গেলো। ছোটবেলার গল্পের সেই ভূত-শাকচুন্নী যেমন চলে যাবার সময় বড় বটগাছের ডাল ভেঙে যেতো তেমনি "সিত্রাং'  রেখে গেলো এক বিধ্বস্ত সুন্দরবন! নামের সাথে বনটার আর তেমন মিল পাওয়া যায় না, এ বিষয়টা বড্ড বুকে বিঁধে! 


ফেসবুক খুললেই ভাইরাল নানান বিষয় আর বিধ্বস্ত সুন্দরবনের দৃশ্য আমার প্রকৃতিপ্রেমী মনটা আর সহ্য করতে পারছিলো না। তাই মনের মধ্যে এক প্রকার অনুভূতিহীনতা নিয়েই পড়তে লাগলাম কবিতার বই (পিডিএফ ভার্সন) 'মাতালগুচ্ছ'। ফেসবুকে যে অল্প কয়জন কবি লেখককে ভালো লাগে, মন থেকে যাদের লেখা আমাকে টানে তাদের-ই একজন কবি আদিত্য আনাম। কবির ভিন্নধর্মী লেখা, শব্দের বিন্যাস ও উপমার প্রয়োগ, বাস্তবতাময় বাক্য সংযোজন, একটি মানুষের মন-মানসিকতার প্রতিচ্ছবি যেন ফুটে উঠে-যা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে। খুব চমৎকার ছোট ছোট গুচ্ছ কবিতায় সাঁজানো 'মাতালগুচ্ছ' বুঝতে হলে আমার মনে হয় সাধারন গুচ্ছ জ্ঞানে তা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন মানুষকে অনুভব করার শক্তি থাকা আর বাংলা ভাষায় বিশেষ দক্ষতা। এই বইটি অনেকটা সেই বাংলা প্রবাদের 'মুক্তোর মালা'র মতো যা যার তার হাতে পড়লে প্রবাদের সেই 'বানরে'র হাতে পড়ার মতো-ই হবে। 

প্রবাদে বলা আছে "বানরের গলায় মুক্তোর মালা শোভা পায়না", আমার মতে এই বইটিও তেমনি। সবাই এর মর্মার্থ বুঝতে পারবেনা। 

'মাতালগুচ্ছ' কাব্যের কবিতাগুলো ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় তবে এটা বুঝতে পারি যে, যদি এই ছোট্ট লেখাগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায় তবে বিরাট একটি প্রবন্ধগ্রন্থ লেখা যাবে। যা মানুষের মানসিকতায় বিরাট প্রভাব ফেলবে। আদিত্য আনামের প্রতিটি লেখাই মানুষের মনোজগতকে স্পর্শ করে বলে আমি মনে করি। ফিলোসফি ও সাইকোলজিক্যাল বিভিন্ন বিষয় এই সব কবিতায় খুব চমৎকার ভাবে প্রতিফলিত হয় দারুণ সব উপমার মাধ্যমে, যা মনের কষ্ট, দুঃখ, প্রেম, বিরহ, চাওয়া, পাওয়া, হারানো কিংবা না পাওয়া সমস্ত কিছুকে প্রকাশ করে। আমি এই কবিতায় মনোনিবেশ যখন করেছি, মনে হয়েছে আমার চিন্তা ভাবনা এমনকি আমার মনোজগত যেন কবিতার এই জগতে হারিয়ে গিয়েছে। প্রতিটা বাক্যই ছুঁয়েছে এই ক্ষত-বিক্ষত বর্ণহীন হৃদয়!

২০১৯ সালে "বেহুলাবাংলা" নির্বাচিত পাঁচ তরুণের কাব্য পুস্তিকা'য় প্রকাশিত হয় আদিত্য আনাম-এর এই "মাতালগুচ্ছ"। যাতে রয়েছে ৪০টি কবিতা।শিরোনামের রয়েছে পুরো সার্থকতা। এই লেখাগুলো বুঝতে হলে হয় 'মাতাল' হতে হবে নতুবা 'মাতাল'কে বোঝার মতো মানসিকতা থাকতে হবে, তার আগে এটা বুঝতে হবে যে কবি 'মাতাল' বলতে কি বুঝিয়েছেন! আর এজন্য পুরো বইটি মনোযোগ দিয়ে বোঝার মত করে পড়তে হবে।

নবীন তরুণের এই লেখার মধ্যে আমি দেখেছি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের মতই বিদ্রোহী আভাস, দেখেছি রবি ঠাকুরের কবিতার মতই সাধারণ বাক্যের মধ্যে দ্রোহ আর প্রেমের প্রতীক রুদ্রের প্রেমের ছায়া। একটি লেখাকে তখন-ই সার্থক আমি মনে করি, যখন সেটি অন্যের হৃদয় স্পর্শ করে নতুন ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে, আন্দোলিত করতে পারে। বই সভ্যতার প্রতিচ্ছবি। সমাজ পরিবর্তনের অনন্য হাতিয়ার। ফরাসী বিপ্লব ঘটানো জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো'র সেই "সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট" এর কথাই উদাহারণ স্বরূপ বলা যায়, যা শুধু ফ্রান্স কিংবা ইউরোপ নয় বদলে দিয়েছিলো পুরো বিশ্বের চাকাকে। আমার মনে হয়, কেউ যদি কোন কারণে আত্মহত্যা করতে চায় কিংবা মানসিক কোন বিপর্যয়ে ভোগে তাহলে তার জন্য একবার এই "মাতালগুচ্ছ" পড়া ও বোঝা ভালো হবে। কেননা, এই বইটির প্রতিটি বাক্যে  ফ্রয়েড, হেগেল আর ডেল কার্নেগীদের অদৃশ্য বিচরণ লক্ষ্য করেছি আমি। অবিরাম শুভকামনা তরুণ এই কবির জন্য। বর্তমানের প্রচলিত ধারার থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম স্বতন্ত্রতায় পরিপূর্ণ আরো আরো "মাতালগুচ্ছ" যেনো আমরা পাই। এই মাতাল -কলম যেনো তাঁর উদ্যমে লিখতে থাকে তাঁর মতো করে অবিরাম - এই প্রত্যাশা প্রতিনিয়ত।


প্রসঙ্গ—মাতালগুচ্ছ 

শামীমা রিতু

Shamima Ritu

২৭ অক্টোবর ২০২২।


কবি: আদিত্য আনাম



পাঠ প্রতিক্রিয়া: শামীমা রিতু

 


হরকরা প্রকাশনা 
ফেইসবুক পেইজ- https://www.facebook.com/horkoraprokashon
যোগাযোগ- ভিক্টোরিয়া রোড, টাঙ্গাইল ১৯০০ (প্রধান অফিস)
ফোন- 01301012096
ই-মেইল: horkoraprokashon@gmail,com


Post a Comment

Previous Post Next Post