মুক্ত আলোচনা /ঈদ সংখ্যা নিয়ে এত কথা কেন?/ গোলাম রববানী/ হরকরা

ঈদ সংখ্যা নিয়ে এত কথা কেন?

গোলাম রববানী



আপনি অনেক ভালো লিখেও হয়তো স্থান পাচ্ছেন না? অনেকে আবার ভালো না লিখেও স্থান পেয়ে যাচ্ছে! অথবা এর বিপরীত। এমনকি অনেকে জানতেই পারছেন না যে- কখন কোন লিটল ম্যাগাজিন বা সাহিত্যের ছোটোকাগজ অথবা জাতীয় দৈনিক পত্রিকার ঈদ সংখ্যার জন্য লেখা নিচ্ছেন।লেখা নিয়েছেন। অথবা লেখা নেয়া হচ্ছে।অনেকের আফসোস হচ্ছে ঈদ সংখ্যার লেখক সূচিতে নাম দেখতে না পেয়ে।তারচেয়ে বড় বেশি বেদনা লাগছে ঘুরেফিরে একটি বিশেষ শ্রেণির লেখা দেখে।কী আর করার! আমন্ত্রিত লেখক হিসেবেও আপনি সাড়া পাচ্ছেন না; না-কি সম্পাদকের সুনজরেও ঠাঁই মিলছেন না?না-কি সেরা লেখকের তকমা লাগাতে অথবা জোটাতে পারেননি এখনও ? না-কি আপনার লেখার গুণগত মান খুবই জঘন্য?  নাকি লেখার ধরণের কোনও বিশেষত্ব নেই? না-কি আপনার পাঠানো কোনও লেখা সম্পাদকেরা আমলেই নেচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। 
এমনটাও শোনা যায় সম্পাদকের সন্তুষ্টি অর্জনে সার্থকতা পেলে ঈদ সংখ্যায় লেখা আসে; অন্যথায় হিতে-বিপরীত ঘটে। কিন্তু লক্ষণীয় বেশিরভাগ লিটল ম্যাগাজিন বা সাহিত্যের ছোটোকাগজ অথবা দৈনিক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় যাঁদের  লেখা এসেছে তাঁদের অধিকাংশই প্রবীণ লেখক বলে মনে হয়েছে। এমনটা অনেকেই ভাবছেন সেটা সোশাল মিডিয়ায় ফেসবুকে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।সেখানে নবীন লেখকদের সংখ্যা খুবই নগণ্য অপ্রতুল। 

আপনি নিজেকে নিজেই হয়তো অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন করাচ্ছেন।কয়েকটা দৈনিকের ঈদ সংখ্যা দেখলাম একটা নির্দিষ্ট সারির সেরারা জায়গা দখল করে আছেন।দখল করে আছেন বলতে গুণী সাহিত্য সম্পাদকের কাছে তাঁদের লেখায় সেরা।তাঁদের থেকে লেখা চেয়ে নিয়ে ঈদ সংখ্যার জমজমাট আয়োজন পরিপূর্ণ করতে চেয়েছেন।করছেন। বর্তমানে ফেসবুকের আদলে লেখা চেয়ে নেয়ার সুবিধাটা বেশি হয়েছে। কিংবা মেসেঞ্জার অথবা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেও। ঈদ সংখ্যা বলে কথা! মানসম্মত এবং পাঠকপ্রিয়তা কথা চিন্তা করেই তাঁদের লেখা নিয়ে সাজিয়েছেন ঈদ সংখ্যা। কিন্তু এমনটা কেন হতে হবে?  নিশ্চিত তাঁদের লেখার যোগ্যতার মাপকাঠি আর গুণগতমান প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনও উপায় নেই। এজন্য তাঁদের জায়গা পূরণ করে অন্যদের আর ঠাঁই মিলছেই না।এখানেই অনেকের আক্ষেপ রয়েছে।অভিযোগ রয়েছে।অনুযোগ রয়েছে।ক্ষোভ রয়েছে।অভিমানের পাল্লাটাও বেশ ভারী হয়েছে।

বয়োজ্যেষ্ঠ লেখকদের লেখনী নবীনদের তুলনায় বিস্তর ফারাক হয় সেটা স্বাভাবিক; এমন ধারণা অনেকের থাকতে পারে।থাকাটা অসুবিধের কিছু না।কিন্তু এ বিষয়টির ঘোরতর বিরোধী আমি। নবীন লেখকেরা ভালো লিখছেন না খারাপ লিখছেন সেদিকে দক্ষ এবং আদর্শ সাহিত্য সম্পাদকের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত। কিন্তু পুরোপুরিভাবে সেটা হচ্ছে না।গুটিকয়েক সাহিত্য সম্পাদক তার নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের জায়গাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছেন। ঈদ সংখ্যা করার আগেই লেখকদের লেখা পাঠানোর আহবান করেন। লেখা পাঠানোর বিভিন্ন ইমেইল ঠিকানা দেন।কিন্তু, অনেক সাহিত্য সম্পাদক আছেন যাঁরা ঈদ সংখ্যার ব্যাপারে আগ থেকে কোনও তথ্য না দিয়েই গোপনে গোপনে লেখা চেয়ে নেন। পরবর্তীতে হকারদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।ঈদ সংখ্যা সংগ্রহ করে নিতে বলেন।কিন্তু কেন এমনটা  হবে?লেখকরা সৌজন্য কপি পাওয়ার অধিকার রাখে।সম্মানি পাওয়ার অধিকার রাখে। যে সব না হয়ে বরং লেখকদের লেখা নিয়ে তাঁদেরকেই ঈদ সংখ্যার কপি কিনে নিতে বলছেন।পাঠকের কী ভাটা পড়েছে? বিষয়টি কতটুকু ন্যায্য বা উচিত এ বিষয়ে অনেকের ভালো ধারণা রয়েছে।

 সাহিত্য সম্পাদকদের বিরুদ্ধে প্রায়শই  সিন্ডিকেটের প্রশ্ন ওঠে।স্বজনপ্রীতির একটা গন্ধ ওঠে।যেটা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের জন্যে মোটেও শুভকর নয়।কারণ তরুণ লেখকদের আবিষ্কার করার সক্ষমতা রয়েছে শুধু আদর্শ সাহিত্য সম্পাদকের। সিন্ডিকেট, স্বজনপ্রীতি, ফেবার পাওয়া রীতিনীতি থাকলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে ভালো লেখকের জন্ম হবে না। সাহিত্যাঙ্গন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে।এভাবে বলা যায়-সাহিত্য সম্পাদক হওয়ার যোগ্যতা শুধু তাঁরাই রাখে- যাঁরা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বোদ্ধা। সাহিত্যের সমস্ত শাখায় যাঁদের যথেষ্ট বোধজ্ঞান রয়েছে। যদি এভাবে বলি- কাজী নজরুল ইসলাম , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হকের মতো এমন গোছের ব্যক্তিত্ব। তা না হলে যা হয় আর কি! লেখক যা লিখে পাঠালেন তা-ই  ছেপে দিলাম। ভালো-মন্দ বাদ বিচার করার প্রয়োজন হলো না। এমনটা হলে তো দায়সারা হয় বটে!এমন অনেক সাহিত্য সম্পাদক রয়েছে। তবে ভালো সম্পাদকের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। তাঁদের কাজও কম প্রশংসনীয় নয়।

সমসাময়িক অনেক তরুণ লেখকেরা প্রতিনিয়ত লিখেই চলেছে। তারা হয়তো আড়ালে আবডালে থেকে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সাহিত্য সম্পাদকদের এখানে একটা বড়সড় রকমের গাফিলতি আছে।যেমন গাফিলতি আছে তেমন হীনমন্যতা আর অহংবোধ আছে। বছরের পর বছর লিখেই চলেছে এমন অনেক আছে লেখালেখির জগতে। আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তারা নিয়মিত লিখছেন।অথচ এমনও অনেক সাহিত্য সম্পাদক আছেন তাদের ইমেইলে লেখা পাঠালেও ন্যূনতম বোধ থেকে তাদের লেখা দেখেন কি-না সন্দেহ। লেখাটি ভালো না মন্দ না পড়লে তো আর বোঝার অবকাশ থাকে না। হোক সেটা ঈদ সংখ্যার জন্য অথবা দৈনন্দিন সাহিত্য আয়োজনে।

ঈদ সংখ্যা করার আগে সাহিত্য সম্পাদকদের উচিত পত্রিকা মারফত বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান লেখা সংগ্রহের ব্যাপারে।  ইমেইল ঠিকানাও দেয়া। লেখার গুণগত মানের উপর নির্ভর করে লেখা নির্বাচন করা। কোনও নামকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা।তাহলে নতুন নতুন লেখক আলোর মুখ দেখবে। অনেক পত্রিকায় সাহিত্য সাময়িকীর যে ইমেইল দেয়া থাকে সেখানে লেখা পাঠালে লেখাটি দেখা হয় এমনও শুনেছি। সাহিত্য সাময়িকীর ইমেইল সম্পাদকদের নিজস্ব ইমেইল সেটা অনেকেই জানেন না।ইদানীং মেসেঞ্জারে এক লেখক আরেক লেখকের কাছে ইমেইল চাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্য পাতার ইমেইলটা সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।

 এন্ড্রয়েড ফোনের অভ্রতে লিখতে অনেকেই সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে অনেকেই লেখা পাঠাতে পারবে।সম্পাদকদের উচিত প্রত্যক লেখকের লেখা পড়া।ভালো হলে পত্রিকায় ছাপাবে না হলে বাদ দেবে সাথে অন্তত ফিডব্যাকের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।সেক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ পাবে মানে ভালো করে লেখার প্রচেষ্টা থাকবে। ঈদ সংখ্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হয়তো  কিছু অপ্রয়োজনীয় কথাও বলতে হয়েছে। ঈদ সংখ্যা লেখক-পাঠকের একটা আবেগের জায়গা। আসলে বিচার বিশ্লেষণ করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি ঈদ সংখ্যা নিয়ে কতগুলো লিটল ম্যাগাজিন ঈদ সংখ্যা বের করলো, অনলাইন পোর্টাল কিংবা জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ঈদ সংখ্যা বের করলো। সংখ্যাগুলোর লেখার মান নিয়ে বলা মুশকিল। তবে এ বিষয়ে যারা গবেষণা করেন তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
কথা না বাড়িয়ে শেষ করা করাই ভালো হবে।তবে এটা ঠিক ঈদ সংখ্যা প্রকাশের আগে প্রকাশক সম্পাদকদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখেই বের করতে হয়। এখানে অর্থের বিরাট একটা ব্যাপার রয়েছে। বিজ্ঞাপনের বিষয় রয়েছে।ঈদ সংখ্যা বাণিজ্যিক হোক কিংবা সাংস্কৃতিক হোক সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব বহন করে না। হয়তো সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিতে পারে এমন একশ্রেণির লেখা ঈদ সংখ্যায় স্থান পেয়ে যাচ্ছে বলাবাহুল্য। যাইহোক ভালো-মন্দ অথবা মন্দের ভালো মিলিয়েই ঈদ সংখ্যা হচ্ছে কথাগুলো অপ্রিয় হলেও সত্য।। সবচেয়ে বড় সত্য ঈদ সংখ্যা হচ্ছে এটাই আনন্দের। আগামীর পথে ঈদ সংখ্যাগুলো আরও উজ্জ্বলতায় সমৃদ্ধি হোক এমনটাই কামনা করি।

গোলাম রববানী, কেশবপুর, যশোর
মোবাইল নাম্বার : ০১৭৩৭৮০৭০০৮

Post a Comment

Previous Post Next Post