আব্রাহাম তামিমের কবিতা

আব্রাহাম তামিমের কবিতা






কি যেনো ভুলতে চেয়েছিলাম


ভুল খোঁপায় গুঁজে সোনালু ফুল
মাথাচাড়া দিয়ে তোমারও ভুলে যাওয়া রোগ
বিঁধে থাকা কাঁটার মতন কে? হৃদয়ে নীল অভিযোগ
নিশ্বাসে বিষণ্ণ টান - মনে পড়ে থাকে
কাজল জড়ানো মায়ায় স্মৃতিশীতল ঘোর
বুকের কোণে রিনিকঝিনিক নির্জনতা - প্রেম
কাকে যেনো আঁকতে গিয়ে ভুলে গেছো নিজের মুখ
তোমার সেলফ পোট্রের্ট বলতে থাকি শুধু আমি
জীবনের বিচিত্র আয়োজন বৃথা শব্দে মোড়ানো -
তবু কেউ কেউ ব্যর্থ থাকতেই আনন্দ পায়
আমি বোধ হয় কেউ
নিশ্চিন্ত মৃত্যু বিড়ালের মত কোলে এসে ঘুমায়
মৃত্যুর পূর্বে ভুলে যাই নিজেকেও।





একাকীত্ব

ঈদের নামাজ শেষে নিজের সাথে কোলাকুলি করি।





ও মাউথঅরগান


গুমো ধরা ব্যাডসিট
আধখানা থাকি জঞ্জাল জড়োসড়ো
বইয়ের কফিনে মোড়া আমি অদরকারি মানুষ
আগামাথা টুকরো টুকরো আহত সময়ের অক্ষর
বেঁচে থাকার মোহ নেই - এতো আয়ু অনর্থক
ভাবনাহীন ডুবে যাই জঞ্জাল জীবনে
সময় ফিরছে আবার নিজেদের ঘরে;
বুক থেকে বুকে হাঁটা শিখে গেছি নির্ভুল - প্রচন্ড জ্বরেরধাক্কায়
দৌঁড়তে দৌঁড়তে হাঁটতে হাঁটতে হাঁপাতে হাঁপাতে জীবনের কাছে
নিজের পাছাই মারি লাথি - ছাইবাক্সে কিছু স্মৃতি জ্বলজ্বল;
ঘাসের মতন বেড়ে উঠছে চুল শিশির জমছে চুলে
ঘর থেকে সেলুনের পথে নেমে মনে পড়ে জীবনের ব্যর্থতা
বুক কাঁপে বেসুরো নিয়মে অথবা নিয়মের খোঁয়াড়ে শরীরমন
হারিয়ে যাই সবুজ অতীতে দাঁড়িয়ে কৃষাণী মেয়ে
বাঁকারোদ্দুরে ঝলসে ওঠা সোনালি ধানমাখা রঙ
পিচ্ছিল চোখে ভেসে ওঠে ভ্রু ঠোঁট আঁচলের গিট
কলসভাঙা নদের ঘাটে মনে পড়ে অপরাহ্ণের পাখিসুর
আহা! পাতাকুড়ানি মেয়ে
ধানক্ষেতের আল ধরে হেঁটে গেছে - ছেড়ে গেছে
হারানো অন্ধকারের শেষ প্রান্তে লেবুপাতা ছুঁয়ে
নগ্নবেড়ার ওপাশে মিলেছে জ্যামিতিক সংসারে
এড়িয়ে যাবার সময়টুকুও থাকেনা ও সুবর্ণ হাতে
অতীতে
অথচ মাউথঅরগানে কোনো ভেলকিবাজি ছিলোনা
একসাথে বেজে উঠি হৃদশূন্য
ধানমাঠে তোমার বিমগ্ন ঘ্রাণে - দাঁড়িয়ে একা
অথবা সব ছেড়েছুড়ে
চোখে জলে জঞ্জালে
পড়ে থাকি পাশাপাশি
কান্না শুকানো বেডসিটে
ও মাউথঅরগান
দীর্ঘসুরে নিয়ে যাও হারানো নদের ঘাটে
নিয়ে যাও কৃষাণী মেয়ের পাতাকুড়ানি বিকেল
নাকফুল হারানো কচুরিপানায়
প্রাণবন্ত দলবাঁধা পাখিদের ডাকে - স্বাধীন সুরে
নিয়ে যাও







শিরোনামহীন কয়েকটি কবিতা


০১.


শিউলির মাঝে দাঁড়িয়ে বিষণ্ন গাছ
ফুল আশ্রিত শিশিরের আয়নায়
শব্দহীন স্নিগ্ধতায় ব্যর্থ প্রেমের মুখ
আহা পারিজাত!
মানিয়ে নেয়া আঁধার শেষে নিজেকেই ভালোবেসে
কি দারুণ ঝরাও প্রেম
বোঝাও
নিরবতারও তীব্র ঘ্রাণ হয়
ফুলের নামে মূলত মানুষ কুড়ায় তোমাকে
নিজের ঝরানো সুন্দরে একা দাঁড়িয়ে ঠাই তুমি
জমে থাকা শিশিরে প্রেমের মুখ দেখো স্বচ্ছতায় ।


০২.

অনুভবের এ্যাকুরিয়ামে মন
চিন্তারা এসে করে চঞ্চল
ঘোলা করে জল - চিন্তার এই-ই কাজ
তবে মনেরও আছে মনোযোগ - স্বচ্ছতার সুযোগ
যদি থাকে অটল।


০৩.


দূর থেকে তোমাকে এখন
প্রৌঢ় বাড়ির মত মনে হয়
যে বাড়িতে থাকে এক আনকোরা নারী
সুযোগ পেলে যাই চা বিড়ি খাই কথা খাই
অথবা একগাদা নিস্তব্ধতা নিয়ে ফিরি।


০৪.

জীবন মৃত্যুর তফাতে
আমাদের দিন যায় নানান অপেক্ষাতে।


০৫.

তুমি মৃত্যুর মত অনিবার্য হইতে পারতে
চাইলেই এড়াইতে পারতাম নাহ।



০৬.

যাকে মনে রাখতে চাই তাকে তো রাখতেই পারি
যে না চাইতেও পড়ে যায় মনে সে এক স্বৈরাচারী।


০৭.


যা কাগজে লিখলাম
ছোট্ট অভিমান পুড়িয়ে ফেললাম
যা টাইপ করে লিখলাম ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে দিলাম
লেখাগুলো কোথায় যায়? পুড়ে কোথায় যায়? মুছে দিলে?
যে সকল কথা লিখবো লিখবো করে লেখা হয়ে উঠলো না
সেই সব কথারা কোথায়?
তারা কি সংসার পেতেছে? কি জানি, সুখী হোক
কত নাম লিখে মুছে দিলাম সে নামগুলো কি নদীর?
নদীর কাছে জল নিতে সে কি এখনো আসে? সে কে?
কোথায় ছিলাম জেনো - ও নদী
সে নদীর নাম তো মনে নেই
লেখাটা উৎসর্গ করবো - কিন্তু কার নামে? কোন নামে?
যে লেখাগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেলো ঐ ছাইয়ের নামে?
নাকি ব্যাকস্পেসে মুছে যাওয়া! কি যে মুছে গিয়েছিলো!
তা কি সার্থক কোনো কবিতা? ছেলেবেলার কোনো বন্ধুর নাম?
কোনো ঠিকানা? যা কোনো ভাবেই আর মনে আসেনা
যা লিখবো লিখবো করে লেখাই হলো না, সেগুলোর নামে?
কি নামে? কোন নামে? নদীর নামে? নারীর নামে? সুরের?
যথেষ্ট হয়েছে,
এখন দুঃখ লিখলাম পুড়িয়ে ফেললাম - দুঃখ তো গেলোনা
হতাশা লিখলাম ব্যাকস্পেসে মুছে দিলাম - হতাশা তো গেলোনা
যা লিখবো লিখবো ভাবছি, হয়ে উঠছে না, তা কি তুমি? যে জল নিতে আসতে রোজ ভুলে যাওয়া নদীর ঘাটে
ধ্যাত্তারি, এই ভুলভাল লেখার কি যেনো নাম ভেবে রেখেছিলাম তাও ভুলে গেলাম
এই ভুলে যাওয়া নামগুলো কোথায় যায়?



০৮.


সহস্র অনুমান আমাকে অস্থির নিঃসঙ্গ করে রাখে
আমি আমার পিছুটান হয়ে বসে থাকি।



০৯.


বুকের মধ্যে হাজার স্বপ্ন লুকিয়ে
চা খাই চুমু খাই মরে যাই-
নিঁখোজ ভোর দেখা হয় না কতকাল
বিচিত্র দুঃখ নিয়ে কেটে যায় দুধভাত জীবন
এক মধ্যরাতে কেঁদে ওঠে চাঁদ
পাথর চোখের জল গড়িয়ে মেঘের মতো
বিদ্ধস্থ - পকেটের অবস্থা করুণ হলে
প্রেমিকা থেকে পালিয়ে বেড়ায় নিমগ্ন বিকেল
সেচ্ছায় চুপ করে থাকে ঈশ্বরের খিস্তি অার
মৃত্যুদন্ডিদের মত উর্বর বেপরোয়া লোকালয়
হেঁটে বেড়ায় শরীরের আনাচেকানাচে
অপ্রয়োজনীয় অতীত - ক্ষমা করি
চোখের কাছে জমানো ঋণ নতজানু
ঘুরপাক মানুষ প্রতি মুহূর্তে একা।



১০.

খুব একা হয়ে গেলে
নিজের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তে হয় ;
বাঁচতে হয় নিজেকে নিজের সাথে মানিয়ে









Post a Comment

Previous Post Next Post