মুক্তি পেতে হলে যাব- কবির হোসেন
বই - মুক্তি পেতে হলে যাবমানুষ কোথা থেকে কীভাবে মুক্তি হতে চায়? আর মুক্তি হতে চায়লেই কি আর হওয়া যায়? যায় না! তবুও কারো কি চেষ্টার কোনো ক্রুটি আছে? নেই.....জন্মের পর থেকে একটার পর একটাই জড়িয়ে যাচ্ছি অদ্ভুতভাবে।
আজ মাত্রই পড়ে শেষ করলাম কবির হোসেন-এর কাব্যগ্রন্থ "মুক্তি পেতে হলে যাব" বইটির নামে এমন মুক্তি উল্লেখ থাকলে কী হবে? আসলে বইটির ভিতরে থাকা কবিতাগুলি আমাদের সবার জীবনে সঙ্গে জড়িত।
কিছু কবিতায় সংসার জীবনের নির্মম আর্থিক অবস্থা দেখানো হয়েছে আবার কিছু কবিতায় বলা হয়েছে গোলাপের লাল রঙের মতো গাঢ় বিচ্ছেদের কথা।
আবার কিছু কবিতায় নিজেকে খোলা আকাশের মতো দেখিয়েছে! দেখিয়েছে কতটা কষ্ট থাকে মগজে জমা।
কবি কার রূপ ধরে কী লিখে গেছে সে তো বহু গল্প তবে 'নিকটত্ব বজায় রাখুন' কবিতায় আমি আমায় খোঁজে পাই! যেনো এ কবিতাটা আমার জীবন দেখেই তুলে ধরেছে বইয়ের পাতায় শত-শত অক্ষরে।
◆ 'অল্প প্রতিবেশী' কবিতার দৃশ্য যেনো পড়ার সময় আমার চোখে ভেসে উঠছে। অর্থাৎ যা পড়লাম তাই হচ্ছে আমার আশেপাশে আর আমি স্থির হয়ে বসে আছি দর্শক সেজে সিনেমার হলে।
◆ 'হিউম্যন রোল' কবিতায় আমি চিন্তা করি আদৌ কি সম্ভব মানুষের রোল খাওয়া তবুও বিছানা বালিশ দিয়ে!
◆ 'যৌথ মূলধানী কোম্পানি' কবিতার মূলভাব প্রতিবার আমার মনে হয় যখন কলেজ যাওয়ার পথে বাসষ্টেশনে এক জুতা পরা চাচাকে দেখি!
◆ 'দুধদাঁত' কবিতাটা পড়ে মনে হচ্ছে, আমার শৈশবে কেনো দাদা নামক মানুষটা ছিলো না? থাকলে বোধহয় তাঁর সঙ্গে আমিও গাছের মতো আমার দুধদাঁত রোপণ করতাম একবার!
◆ 'পদ্মাপাড়ের কাহিনি' কবিতাটা বেশ চমৎকার। আমি পড়েছ আর ভাবছি, পানি মরে আগুনে? হয়তো মরে! মরতে-মরতে জলীয় বাষ্প হয়ে আবার আকাশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে আগুনকেই মারে!
বাঁচা-মরার এ গাণিতিক সূত্র কারো বুঝার নয়।
◆ 'বৈদ্যুতিক লাইন' কবিতাটা মতো মাঝেসাঝে আমিও ভাবি কিন্তু একবার শট খেয়ে বেঁচে গেলে ভাবি, জীবন আমায় এত সহজে মৃত্যুর কাছে বিক্রি করবে না।
তাছাড়া বইয়ে থাকা কয়েকটা লাইন ছিলো গুরু গম্ভীর গভীর!
• পথ যত বড় হয় ততই তার নাচ কমে।
• তিনি (মা) জানেন- বড়শি দিয়ে আঁকিবুঁকি যাই করা হোক, সুতা শেষ হয়ে গেলে মাছই আঁকা হয়।
• ডিজেল পান করে দৌড়াব মা-টায়ারের জুতা পরে।
• বাঁধাকপিতে মুরগির কতগুলো ডানা থাকতে পারে? এত এত ডানা, না জানি কত পাখি পুষে রেখেছে!
• এবং নাকে-মুখে কাঁথা দিয়ে - ভেতরে হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে থাকি অনাগত সন্তানের মতো।
• অবশ্য ঘরে চিনি না থাকলে মা মাঝেমাঝে শরবতের গ্লাসে চা খাওয়ান।
• ছোবলের আরও বেশি ভয়,পথটা যদি র্সিল হয়।
বস্তুত; বইটা উৎসর্গ করা হয়েছে কল্পনা করে! তাই এত সুন্দর কবিতাগুলো লেখা হয়েছে। কারণ, চোখ যা দেখে তা নিয়ে আরও বেশি মগজে রং তুলি মিশিয়ে সুন্দর একটা কল্পনার ক্যানভাস তৈরী করা যায়। আর এ ক্যানাস কারো না কারো জীবনের সঙ্গে মিলে যায় অদ্ভুতভাবে।
এছাড়া বইতে রয়েছে ৫৫টি কবিতা। কবি কবিতাগুলো খুব সহজ করে লিখেছে কবিত্বের নির্যাস ছেঁকে, যেনো সব পাঠক অনায়সে পড়তে পারে, চিন্তা করতে পারে কী ঘটে যাচ্ছে মানুষ সময়ের সামুদ্রিক আয়নায়...
কবি - কবির হোসেন
প্রচ্ছদ- সারাজাত সৌম
কভার মূল্য- ২২০৳
পৃষ্ঠা-৬৪
প্রকাশক - হরকরা প্রকাশনা