ঘনঘটা বোধের চরকার পাঠ প্রতিক্রিয়া
লিখেছেন- সাদিয়া শিমু
"সূচি খুঁজতে গেলে পত্র জল হয়ে যায়, পত্র খুঁজতে গেলে উড়ে বেড়ায় সূচির মাশরুম ভ্রম" - তাইতো সূচিপত্রহীন একটি অলৌকিক মুগ্ধতার বহিঃপ্রকাশ করতে এসেছি।
"আঁধারে পথ হারিয়ে ফেলেছি।
সামান্য আলো পেলে গন্তব্যে পৌছাতে পারতুম।
কিন্তু আলো!
আলো চাইনে।
আলো এলেই গন্তব্য
আর গন্তব্য পেলেই পথ হারিয়ে ফেলবো। "
- এরকম আলোকধাঁধাঁয় চোখ হারিয়ে গন্তব্য ভুলে চক্রের চিরকালীন মোহমায়ায় ডুবে ডুবে অন্ধকার হাতড়ে যাচ্ছি। যেখানে না আছে কোন পথ, না আছে কোন গন্তব্য। কেবল অন্ধকারে ঝলকিত এসে ঘিরে রেখেছে পরম আবেশে।
"চেনো তাকে?
আমার বোন।
যে আজ ভোরে আমার কাছে এসেছে
এসেছে গলাভর্তি নাইলন দড়ির দাগ নিয়ে।"
- চির যত্নে কবি লিখেছেন আমাদের কথা, সকলের কথা। সে কথা গুলো এতোটাই জীবন্ত, যে তারা কথা নয় প্রত্যেকেই আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের খুবই চেনা, পরম আপনজন। প্রতিটা কথা যেন আমাদেরই চরম দুঃস্বপ্ন।
"কাল আমার বিয়ে
বিয়ের ছবি তুলতে কোলকাতা থেকে লোক আসবে
আমার কী আনন্দ!
অথচ
অথচ রাতেই বাবা ছবি হয়ে গেলেন।
ঈশ্বরের হাত কাঁপলো না
ঈশ্বরের হাত কাঁপে না।"
- কি অবলীলাক্রমে বলে গেলেন তার, আমার, আমাদের কত জনের চিরচেনা আক্ষেপের কথা, চরম অভিমানের ব্যথা। যে গল্প, যে ব্যথা আমাদের চিরচেনা। শুধু তাই নাই, তিনি বলেছেন আমাদের সকলের সেরা সত্য সেই নির্মম ভাগ্যের কথা, যে ভাগ্যের অবহেলায় আমরা কেবল ছাই হয়ে বেঁচে রয়েছি -
"মনের মত যারে পাইছিলাম
মনের মত আমারে যে পাইছিল
তার আর আমার সংসার হইলো না
দুই জনে ভাইসা গেলাম
দুই নদীর স্রোতে- "
শুধু আক্ষেপ কিংবা অভিমানই নয়, কবির রয়ে গেছে অসংখ্য অভিযোগ ও। সেই সকল প্রশ্ন ও করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু এর উত্তর কই? -
"বাচ্চার দুধ কেনার পয়সা জোগাতে না পেরে ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলায়ে
রাষ্ট্ররে গাই ল দিতে দিতে আমার যে বোনটা জীবনের শেষ দুই রাকাত নামাজের জন্য
ওযু করতে গেল
তারে কী তুমি দোজখ দেবে আল্লাহ? "
এত প্রশ্নের ভীড়ে এই মন আজ ক্লান্ত, যার নেই আর কোন অভিমান, নেই অভিযোগ, নেই ঘৃণা। কবির মত একই সুরে আমারো খুব বলতে ইচ্ছে হয় -
" ভালোবাসতে বাসতেই টাইম চলে যায়,
ঘৃণা করবো কখন গো?"