বই আলোচনা/- কেঁপে ওঠে সংকটবাহী জাহাজ/ আলোচনায়- মনিরুজ্জামান অনিক

 



কবিতার আঘাত সইতে না পারলে এই বইটি
আপনার জন্য নিষিদ্ধ। সুতরাং সাবধান!

শুরু করলাম কবি সাগর ইসলাম এর
'কেঁপে উঠে সংকটবাহী জাহাজ' থেকে–
"যুদ্ধ মানুষের রুহ ফিরিয়ে দিলেও কোনদিন চুমু ফিরিয়ে দেয় না।"
এ'টি ৬৩ পৃষ্ঠার একটি কবিতার বই। নাহ্! কবিতার
বই বললে ভুল হবে, বলতে হবে জীবনের ফর্দের বই।
বইটি খুবই ছোট অথচ নিখুঁত এবং ধারালো তরবারি দিয়ে কখন যে কেঁটে ফেলবে আত্মার ভাঁজে ভাঁজে,
তা আপনি টেরই পাবেন না। যেমন টের পায় না সার্জারি টেবিলে শুয়ে থাকা এনেস্থিসিয়া দেওয়া রোগী, অথচ তার শরীর ছিঁড়ে অপসারিত হচ্ছে নিখুঁত দুঃখ।
"
চুমুকালীন সময়ে ইন্টারভেলে থাকে সমস্ত দুঃখ,
শারীরিক আসবাবপত্র যায় ফিজিকাল ইন্টার্নিতে।"
কী বিশ্বাস হয়? হে চুমু দাতা এবং গ্রহীতারা আপনারা
বলুন তো চুমুর সময় আপনাদের ভেতরে যে রঙিন
হাওয়া খেলা করে তার গভীরতা কতটুকু?
" যে জলে মাছ থাকে সে জলে সাপও থাকে। তারপরও
কত কিছু হাতিয়ে যাই এবং তব্দ লাগে সেখানেই—
একমুঠো হাতের তালুতে ত্রিশ কেজি বাজার আঁটে
কিন্তু কারো হৃদয় আঁটে না! "
হৃদয় এমন এক আজব চিজ যাকে মনে হবে ধরতে
পেরেছি অথচ পরক্ষণেই মনে হবে সে এমনই দূরে যেখানে বৃষ্টি আর রোদ্দুরের কবিতার আসর নামে।
সবশেষে এই ৬৩ পৃষ্ঠার ধারালো তরবারি থেকে আমার পছন্দের একটি কবিতা দিয়ে আমার বয়ান শেষ করছি আর হ্যাঁ! আবারো বলে রাখছি আপনি যদি কবিতার আঘাত নিতে না পারেন তবে এই বইটি আপনার জন্য নিষিদ্ধ। কোমলমতী পাঠকদের তীক্ষ্ণ, ধারালো তরবারির দিকে না হাঁটাই উত্তম বলে মনে করছি।
"
সুখ ও দুঃখের মাঝখানে কোন গ্যাপ রাখতে পারছি না।
যদি গ্যাপ রাখা সম্ভব হতো আমি সেখানে বসিয়ে দিতাম তোমার কবর চোখের নামতা।যে এখনো পৃথিবী দেখেনি সে কৈশোরেই বুঝতে পারতো নিঃচিহ্নতাই মূলত চিহ্ন। সূর্যের সাথে দিনের বিচ্ছেদ হলে সার্বজনিন যৌনতাও রাখবে না একটি সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা। এই বোধে সে কৈশোর যৌবনে চিহ্নকাতর হলেও হতো না কোনোদিন বিরহকাতর। "


বই আলোচনায়: মনিরুজ্জামান অনিক



Post a Comment

Previous Post Next Post