বই আলোচনা/ অশ্বমেধ/ আলোচনায়/ তমসা অরণ্য

 

আজ পড়লাম শ্রেয়সীর "অশ্বমেধ"


এবারের বইমেলায় আমার "নাই সন্তানের জননী"-র প্রকাশক অনুপ্রাণনের স্টল থেকে ফোন এলো একজন এসে আমার খোঁজ করছেন। স্টলে খুব অল্প গেলেও আমি বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারতাম না, কিছুক্ষণ পরই ওদের বলে নিজের তালিকা করা বইগুলো কিনতে বের হয়ে যেতাম। তবে একটা সময় থেকে বলে যেতে শুরু করলাম, কেউ খোঁজ করলে যেন আমাকে কল করে ডেকে আনা হয়। কারণ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত যোগাযোগহীনতার কারণে কেউ কেউ আমাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। তো, দ্রুত নিজের পছন্দের বই কিনে অনুপ্রাণনের স্টলের সামনে গিয়ে দেখি- সাগর ইসলাম ও সঙ্গে তিন স্নিগ্ধতা মাখা কন্যা। কারুর সঙ্গেই সামনাসামনি পরিচয় ছিল না। তাদের মধ্যে Karishma Wazed Sreyoshi অন্যতম। ক্যারিশমাটিক শব্দটা আমার বিশেষ ভালো লাগার, তাই কারিশমা নামের প্রশংসা করলাম। তবে পরে শ্রেয়সী নামটা জেনে আরও মুগ্ধ হয়েছিলাম। যাহোক, অনেক আড্ডা-গল্প-মতবিনিময় হওয়ার পর জানতে পেলাম এবার ওরও বই প্রকাশিত হয়েছে। নাম- অশ্বমেধ। কথা বলে মনে হয়েছিল শ্রেয়সীর আঙ্গুলের ডগা বেয়ে কাগজে-কলমে কিংবা স্ক্রিনে স্নিগ্ধ কিছুই আসবে। ওর বইটি না ছিল তালিকায়, না ছিল সেভাবে কেনার পূর্ব পরিকল্পনাও। তবে দুয়ার প্রকাশনী হয়ে চায়ের আড্ডা থেকে ফিরে আবারও দুয়ারের দুয়ারে এসে মনে হচ্ছিলো শ্রেয়সীকে পড়ে দেখা যেতে পারে। আমাদের আশপাশে, চেনাজানায় কিংবা অচেনায় কে কী লিখছে বা ভাবছে জানা থাকা ভালো। আর কিছু বই অপরিকল্পিতভাবেও হোক না কেনা!
আজ পড়লাম শ্রেয়সীর "অশ্বমেধ"। বইয়ের ফ্ল্যাপেই বলা হয়েছে 'পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্যই লেখা'। পড়েও মনে হয়েছে দ্বিমতের অবকাশ নেই। স্নিগ্ধতাপূর্ণ সব কবিতা। মূলতই প্রেম ও বিপরীতে বিরহ। কখনো কখনো প্রেমিকের প্রতি তীব্র শ্লেষ, অভিমানী বিদ্রোহ এসেছে। শেষের দিকে এসে রাজনৈতিক বাস্তবতার কিছু চিত্রও ২-৪টা কবিতায় মিলেছে৷ আমি যখন বইটা কিনি শ্রেয়সীকে বলছিলাম- দেখি, বহুদিন পর একটা প্রেমময় স্নিগ্ধ কিছু কিনে পড়ে দেখি এবং তারই সঙ্গে সঙ্গে পরিচিত হই আপনার লেখার সঙ্গেও। সম্ভবত মোট ৪৫টি কবিতা আছে। আমি বিচারক বা সমালোচক নই, তাই আমি কেবল আমার পাঠ অভিজ্ঞতার কথাই বলছি। গোটা বইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ও দশম কবিতাটি আমার বিশেষ ভালো লেগেছে; যা নিচের ছবিটিতেও শোভা পাচ্ছে। বইটি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে- শ্রেয়সী গড়তে চেয়েছে স্নিগ্ধভাবে এবং তার ভাঙ্গতে চাওয়ার ভেতরেও সেই স্নিগ্ধতা। মানে এক অভিমানী মানবীর অবয়ব। তা সে প্রেমিকা রূপেই হোক কী পর্যবেক্ষক হিসেবে। পড়তে গিয়ে যেটায় একটু ধাক্কা লেগেছে তা হচ্ছে একদম শুরুর কবিতাটি থেকেই বানানগত বিভ্রান্তি ও টাইপো। একবার বলা হচ্ছে 'দেখব' আবার তার পাশেই বলা হচ্ছে 'দেখবো'; অর্থাৎ বানানে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বানানে যা দেখলাম তাতে পরবর্তী বইয়ের ক্ষেত্রে বানানের ব্যাপারটা নিজ দায়িত্বে লক্ষ রাখতে অনুরোধ করব; যাতে শুধু সম্পাদক বা প্রকাশনীর ওপরে ভরসা করা না হয়৷
আরেকটা মজার ব্যাপার অসচেতনেও গুনে ফেলেছি- পুরো বইয়ে সম্ভবত ৪ বার "তমসা" শব্দটি এসেছে। হাহ হা হা... মনে হয়েছে দুম করে ওই ৪ স্থানেই আমি বসে গিয়েছিলাম...
এবার আমি সবার ক্ষেত্রেই কুইক রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই আজ পাঠ করে আজই "অশ্বমেধ"-এর পাঠ অভিজ্ঞতা জানিয়ে রাখলাম। শ্রেয়সীর জন্য শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা...
সবশেষে শ্রেয়সীর কবিতার লাইন-

"কত শত বছর আগে পাহাড় বিশালতাকে ভালোবেসে অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে!
অথচ তুমি আমাকে একটা জনম দিতে পারলে না!"

বই আলোচনা- তমসা অরণ্য

Post a Comment

Previous Post Next Post