ইস্পাত বোঝে না খড়কুটোর দুঃখ (পাণ্ডুলিপি থেকে কবিতা)
নিয়াজ আজিজ দ্বীপ
দহন
আকাশের হৃদয়ে আমি এক নির্বিকার পাখি—
দিক হারিয়েছি; হারিয়েছি পালকের রোদ।
তবুও উড়ে চলি বিষাদের লাল মেঘ বেয়ে—
কখনো দূরবর্তী নদীকে দেখে
ভাবি, তৃষ্ণার বেগে আমার প্রেমিকা।
বর্ণনা
তোমার স্তনের কাছাকাছি
তাকাতেই উড়ে গেল একঝাঁক সাদা পায়রা
পালকের বর্ণনা নিয়ে আর শীতের খোলসে জড়ো হয়ে গেল
আমার সমস্ত আকুল হাত
তোমাকে স্পর্শ করতে না পারার অপরাধে অভিযুক্ত এই শীত
খসে পরলো বীর্যভূমিতে
আমার নরম বিছানায়।
মাংস-নিদ্রায় রেখে আসি এক জ্যান্ত রাঁধুনিকে
পরস্পর লাল-ধোঁয়া
ঠোঁটে চুমুর রেশ ধরে বেরিয়ে আসছে ঘুমের গন্ধ।
চোখে নির্জনতাজুড়ে কুহুকের দল
তবুও কোথাও করাতের গর্জন বেজে ওঠে কোন এক বনের ভিতর।
মহুয়ার চিরন্তন সন্ধ্যাগুলো ঝুলে থাকে
বাঁদুরের মত কোন স্বপ্নের ডালে—
বীর্যের বাগানে এক জ্যান্ত রাঁধুনি
তার খোপার চুল খুলে নির্বিকারভাবে
বাতাসে ভেসে আসছে রন্ধনকালীন শ্রমশিল্প।
অথচ চোখের উজ্জ্বল তারাগুলো খেয়ে ফেলে
যে মাংসাশী অতীত তার নির্মম প্লেটে
আমাকে রেখে নিদ্রা হনন করছে কয়েকটা কাঁটাচামচ।
অবশেষে আমাকে চূলায় চড়িয়ে মাছের মত
মচমচে ভাজা হচ্ছে যোনির একাগ্রতায়।
আমাদের যৌথ শামুক জীবনে কোন ধানের গন্ধ নেই
পড়ে আছে কেবল মাংসরেণু আর বাষ্পীভূত স্তন।
কবিতা ছদ্মনাম
পোড়া বনে
হৃদয় ক্ষনে
চিরে খায়
ফিঙে ঠোঁট—
(আমার)
শরীরজুড়ে
শীতপোকা
আর
মনের ভিতর
রাতের কুয়াশা
উড়ছে তারা—
হৃদয়ে পেকে
নুয়ে থাকে
লাল সূর্যফল;
সেই আলোতে
পোড়ে পাখি
মগজে মগজে
বিছানো ঘাসে
রক্তফুল ফোটে—
স্মৃতির গন্ধ
আজকাল
অকপটে জ্বলে
কাগুজে ডানায়
বক্রতা আঁকে
কবিতা ছদ্মনামে—
ছায়াসমগ্র
নিংড়ে দেখি
ফিঙে ঠোঁট
ছন্দ শেখায়
আমাকে—
বনে বনে
পাতার কঙ্কাল
আগুন
মগজের
গোপন দৃশ্যে—
স্মৃতি ছবিঘর
শুকনো হয়ে
ঝুলে আছে
মাংসলবৃক্ষে—
অথচ
অদৃষ্টের চাঁদ
আর
রক্তফুল গুচ্ছ
খেয়ে ফেলে
একান্তে; আমাকে—
মাংসরেণু
মাংসে’ও বুঝি ফুল ফোটে—
তা’নাহলে বেল বাজিয়ে যে রিক্সাটা যাচ্ছিল—
কেন গন্ধ ছড়াচ্ছিল?
পারফিউম?
নাকি ঘাম আর মাংসের রেণু ।
ধুর শালা! এই বসন্তে নাকে কেমন যৌবন লেগে আছে ;
ভ্রমর মন আর চারপাশে আকুতি ভরা রোদ।
দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম বোধের রক্তথোকায়।
চিন্তার কোন ডালের বোটায়
মগজের সচেতন ইন্দ্রিয় ভাঁজে।
এই যে, দেয়াল দেয়া— তোমার আমার আলাদা সংসার;
স্তরে স্তরে কংক্রিটহৃদয়। অবশিষ্ট যৌক্তিক কয়েন নেই পকেটে।
আত্মকেন্দ্রিক শূন্যতা
অথচ স্বপ্নের পাখিরা ডানা নিয়ে ফিরে গেছে মহুয়া বনে।
বাদুড় হয়ে ফিরবে নিশ্চিত!
তবুও আমরা একে অপরকে কামনা করছি প্লেটোনিক ইশারায়।
মেট্রোপলিস কাঁচের প্রতিফলন চোখে —
আমাদের অনিশ্চিত ঘুম ভেঙে যায়
কর্পোরেট বিছানায়।
ঈশ্বর-হৃদপিণ্ড
পলিথিন ভর্তি আকাশ উড়ে যাচ্ছে সমুদ্রে;
সাদা পায়রার ডানায় মেঘছানা গুলো—
পেয়ারাবন ছেড়ে বেরিয়ে আসে আমাদের ভাসমান তারাপটে।
নীহারিকা রেখাপথ আলোঘর ঘিরে;
সূর্যসূত্রে গাঁথা তোমাদের মুক্তোদানা অগণিত পৃথিবীর কঙ্কাল এখন
ফুরিয়ে যায় সময়ের খাল হ’য়ে ব্ল্যাকহোলে গিয়ে—
সূর্যের ঘুমাতে যাওয়ার সময় হলে শীতল স্নায়ুযুদ্ধে চাঁদ
হারিয়ে ফেলে আলোর দেবতা।
সুপার সাইক্লোন মহামারী তাবিজে যায় না বাঁধা।
ঈশ্বরজ্ঞান ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর পরাজয় নিয়ে বেজে ওঠে সাইরেন।
নক্ষত্রের ওপারে নক্ষত্রে
সূর্যের ভেতরে সূর্যে
কক্ষপথের বাহিরে কক্ষপথে
ফুরিয়ে আসে সময়ের ধারণা—
সময় এখানে শূন্যের জ্যোতি দ্বিগুণ দিয়ে
জ্যামিতির পিরামিডে
ত্রিভুজ কোণে যায় আটকে।
সময় কোন ঈশ্বর হৃদপিণ্ড।
শাদা চোখ
এই মৃত পৃথিবীর পথে আমি কোনো শব্দের খোঁজে দৌড়ে বেড়াচ্ছি।
আলোর কণা—স্নায়ুর প্রান্তরেখা—গ্রহণবিদ্ধ চোখ—যন্ত্রণা স্মৃতি—
এক জীবন কত নিঃস্ব ও নিখাদ।
এই সূর্য পৃথিবীর রেখায় আমি কোনো কালো আকাশ লুকিয়ে পালাচ্ছি।
ছায়াচাঁদ—ত্রিভুজ তারাপথ— শীতল কৃষ্ণবিবর—অন্ধ অভিযাত্রী—
এক শূন্যতা কতো গভীর ও বিষাদ।
একটা প্রশ্ন? ও উত্তর।
এই শাদা চোখ কত নীবর ও দৃশ্যকালো।
দেখা না দেখার বাহিরে—
নিজেই হয়ে উঠলো সে অন্ধদৃশ্য—অনেক সূর্য।
একই রকম
জীবন এক স্মৃতির বয়ান;
মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এই স্মৃতি পিঠে বহন করে চলে যায়
অন্য আরেক স্মৃতির জাদুঘরে—
যতদিন বেঁচে থাকে।
এই স্মৃতিকে হৃদয় কবর দিয়ে রাখে
মাঝে মাঝে খোশমেজাজে দু-একটি স্মৃতি;
পাখি হয়ে উড়ে যায় ডানায়—
পালকে দিয়ে থাকে স্মৃতি বয়ান;
অন্য স্মৃতিমানুষের বুকপকেটে।