কবির হোসেনের কবিতা
❑ 
যুদ্ধ ফেরত একটি গোলাপ চিৎকার করে বলে যাচ্ছে—সে লাল গোলাপ নয়, সাদা গোলাপ!
❑ 
মাথায় হাত বুলিয়ে দাও— আমি বহু কিছু ভুলে থাকতে চাই!
❑ 
আয়না বড়ই ডাকাত, সামান্য ঘুষির অপরাধে আমার হাত কেটে দিয়েছে!
❑ 
লজেন্সের মতো জিভে লেগে থাকবে, এমন রঙিলা হও!
❑ 
তোমার সাথে যেন ডাইনিং টেবিলে বসে কথা হচ্ছে, শুনলেই পেট ভরে যায়!
❑ 
শ্বাসবাদী প্রেম আমাদের, মাঝখানে বেলুন ফুলে যায়।
❑ 
কেরোসিনে ভিজে যাওয়া রশিকে সলতে ডাকলেই রেগে যাচ্ছে!
❑ 
বাঁশঝাড়ে আটকে যাওয়া ওই সাদা ঘুড়ি, ধার করা জোৎস্নায় চাঁদ হয়ে উঠছে!
❑ 
দরজায় টোকা দিয়ে যেখানে চলে যাও, সেখানেই বাঁধব ঘর!
❑ 
পাখির জন্য খাঁচা না হয়ে ডাল হওয়ার চেষ্টা করছি......
❑ 
ভেতরে চাকু দেখিয়ে নেইলকাটার সবকটা নখই কেটে নিয়ে গেছে!
❑ 
চালের ড্রামে মায়ের জমানো নোটের পাশে কয়েনের মতো হারিয়ে আছি!
❑ 
ভেজা কাপড় দেবে না জানি, তবুও তোমার শুকনো রশি কামড়ে পড়ে আছি ক্ষুধার্ত ক্লিপের মতো।
❑ 
চোখের পাতাকে যদি ঠোঁট ভেবে থাকো, চোখ মারাকে চুমু বলে ধরে নিতে পারো।
❑ 
যেন দরজার সাথে পিরিত ছিল— হাল্কা আঘাতেই আঙুল ফুলে আছে অভিমানে!
❑ 
মানুষকে কাঠ বলার অপরাধে, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে একটি গাছ!
❑ 
চোরের মতো খুঁজেছিলাম তোমাকে, ডাকাতের মতো তুলে নিতে!
❑ 
বাতিল তুলি দিয়ে আয়নার ধুলা পরিষ্কার করে দেখি এঁকে ফেলেছি আমার জীবন্ত পোট্রের্ট!
❑ 
রসাতলে গিয়া তল পাইলাম, কিন্তু রস পাইলাম না!
❑ 
মুখোশ লাগানো আছে, মাস্কের প্রয়োজন নেই!
❑ 
তোমার পিঠ সুন্দর—দেখাও যত পারো!
❑ 
পাখির বাচ্চাগুলো বড় হয়ে গেছে, সামনের ঈদে ওদের নতুন খাঁচা কিনে দিতে হবে!
❑ 
তোমাকে পার হতে গিয়ে প্রতিবার ব্রিজ ভাঙার দোয়া পড়েছি..
❑ 
আমি তো সিঁধেল চোর, মাটি কেটে যার ঘরে ফেরার অভ্যাস!
❑ 
হেলান দিয়ে পরীক্ষা করি কে কতটা শক্ত!
❑ 
বাঁশি বাজলেই বাঁশঝাড় নড়ে ওঠে, কেঁপে ওঠে নিজেদের কণ্ঠ শুনে।
❑ 
পা'টা খুঁজে পেয়েছি অবশেষে— প্রেমিকার জুতার ভেতরে!
❑ 
ধাক্কা দিতে চাইলে বলো, নিজ থেকেই পড়ে যাবো।
❑ 
ছোট লেজের প্রাণীর মতো মাছির নিপীড়নে অস্থির মানুষ!
❑ 
ডুবতে ডুবতে অনেক গভীরে চলে এলাম, জলের দেখা পাইলাম না!
❑ 
পিন পতন নীরবতায় দেখেছি খোঁচা-খোঁচা ব্যথা হয়!
❑ 
মই ভেঙে গেছে সব, লুডুটা দাঁড়িয়ে আছে সাপের ওপর।
❑ 
যে কানে শোনে না, তার জন্যই আমার সমস্ত চিৎকার!
❑ 
উঠোনজুড়ে মায়ের ছায়া— মা গেল কই মা'কে পাওয়া যাচ্ছে না!
❑ 
সাঁতার না-জানা লোকের নৌভ্রমণকে সমীহ করি!
❑ 
দুই হাতের বিনিময়ে সেই হাতটি চাই, যা দিয়ে তাকে ধরে রাখা যায়।
❑ 
ঝড়ো বাতাস এলে তোমাকে নিয়ে উড়তে যাবো।
❑ 
দেয়ালে কিছু কথা বলে রেখেছি, সময় সুযোগে কান পেতে নিও।
❑ 
তোমাকে দেখলেই দাঁড়িপাল্লা হয়ে যাই, কথা বলি মেপে মেপে।
❑ 
পাশের বাড়ির মেয়ে এবার নিজের বাড়ি আসো!
❑ 
চলে যখন যাবে ঘুড়িটাও নিয়ে যেও, ইচ্ছে হলে কোথাও উড়িয়ে দিও!
❑ 
তোমার শাড়ি মেপে আসা পিঁপড়ার সাথে সম্পর্ক বাড়াচ্ছি, শিখছি না জানিয়ে কাউকে ভ্রমণ করার কৌশল!
❑ 
ছেড়ে দিলে ট্রেন চলে যাক, আমাদের জন্য রেখে যাক বগি।
❑ 
থালাটা সেঁকে দিলেন মা, রুটির নাম করে খেয়ে নিতে বললেন।
❑ 
যেন নৌকার মতোই ভাসছি, এক গ্লাস পানি খেলে কিছুটা ডুবে যাচ্ছি।
❑ 
লবণ কেনার সামর্থ্য নেই বলে, সমুদ্র থেকে উড়ে আসা বাতাস বয়ামে ভরে রাখেন মা।
❑ 
চোখ মেরে তো সে চলে যায়, দাফন করতে হয় আমাকে!
❑ 
তার ছায়া কথা দিয়েছে, রোদ উঠলেই তাকে নিয়ে আসবে।
❑ 
তোমার ক্লিপের ভরসায় কোঁকড়া চুলের মত বখাটে হয়ে থাকি।
❑ 
একদিন তার চশমা সাক্ষ্য দেবে— আড়চোখে কতবার যে সে তাকিয়েছে!
❑ 
সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে দিচ্ছে, বৃষ্টি, তুমি চলে এসো আমার ঘরে!
❑ 
সাবধানে ঝরো ফুল, কাঁটা পচে গেলেও গন্ধটা ধারালো আছে।
❑ 
তোমাকে বুঝতে গিয়ে সমস্ত কিছু মাথার ওপর দিয়ে তাড়িয়ে দিই।
❑ 
ক্যালেন্ডারে আগুন লেগে গেলে দিনগুলো ধোঁয়ায় কাটে।
❑ 
ভাঙা আঙুলের ইশারায় তীব্র ব্যথা পাওয়া গেছে।
❑ 
হাতপাখায় বাতাস করে গেছি অযথা, কখনো পা জুড়ায়নি!
❑ 
হাত তোমার মোটা হয়ে উঠুক আমার বালার মাপে।
❑ 
টেঁটায় শিকার হলো যে মাছ, তাকেই খাচ্ছি কাঁটাচামচে।
❑ 
আপনাকে বলে আমি কোথাও যেতে চাই— কাউকে বলে যাওয়ার মতো আমার যে কেউ নাই!
❑ 
জানালার পর্দা সরিয়ে আলো দেখে— খাটের ওপর ছায়াদের দৈনিক প্রণয়।
❑ 
এলোমেলো বাতাসের বিরুদ্ধে চিরুনি হাতে দাঁড়িয়েছি।
❑ 
মানুষের জিভ ছুঁয়ে উড়ে গেল পাখিটা, জেনে গেল নিজের স্বাদ।
❑ 
পাখির মতো উড়ছে যে ধুলা, বসে পড়বে মাটির কোনো ডালে।
❑ 
চুল বাঁধার ফিতা দিয়ে, কাকে কাকে মাপো মেয়ে!
