সন্ন্যাসী আরণ্যকের কবিতা: পদাবলী

সন্ন্যাসী আরণ্যকের কবিতা: পদাবলী

 



 

পদাবলী: ০১

দুপুরতো প্রায় ভেজাহাসফাস ঢলোফেলে আসো

মলনের উঠানহাতের কেড়ালকোমরের ভার

আসো সত্বর। ধান তলার গুচ্ছ গুচ্ছ অবদমিত ঘাস— 

যেননিশপিশউঠি উঠি অভিমুখ রোদঊর্ধ্বে

না ছাতিম না শিউলিতীব্র মধ্যদিনতবুও যা ঘ্রাণ!

মেহের খুঁটিটি আমাররেখে কোলের ছেলেচুলার

আগুনদিয়ে গালাগাল একশ হাজারছাড়ো খোপা

না মুছে ঘামের গলাশরীরে খড়ের গন্ধ নিয়েই আসো।

বাহানা ফেলে চোখে তাকাওতাকাও মাটির কলসটি

ধানের আঁটির মতো খুলে যাওঅল্প মোড়ায়।

কোমর থেকে খুলে নিয়ে বেদেনির রক্ষা কবচরেখে অজস্র

ছোবলবজ্রে বজ্রে ফেটে পড়বো নারকেল মাথায়

স্রোত মুখেযুবতী বোয়ালের মতো প্রবল কম্পনে তুলে

জল, গেঁথে রাখো হন্যে শিকারি ভেজা দুপুর বেলায়।

 

পদাবলী:  ০২

আমিমতান্তরে থৈহীনবিশ্বাসী তৃষ্ণা ধর্মেকেবল

এই শর্তে যদি ডাকি জলভিজে যাবে ড্রেসিং টেবিল

ফ্লোর ভেসে যাবে নদীতার ওপার দেয়ালে টিকটিকির

উদগ্র সঙ্গম আর সিলিংয়ে কল্পিত রেখা ধরে বলাকার

নিয়মতান্ত্রিক উড়ে যাওয়া। এমন সাজানো আয়োজনে

পাতা যায় ঠোঁট জলের উপর? ইশারায় দাও গুরুপাঠ

নয়তো ডাঙায় রেখে পরিচ্ছদ, নেমে যাবো গভীর নিচে।

আমি জানি বৈঠা ধরণযেকোনো জলেই তা কম্পমান

তোমার কী চাওয়াআমাকে জানুক লোকে ঘাসখোর

বাঘ বা জলাধার পাশে মাছ শিকারে বসা ব্যর্থ ভালুক!

সকল সারসি ভিন্নতুমি নারীতোমার এবাদত করি

দেহমনে। তবুও মতো দুর্বল আমি দুর্যধনের উরুঅল্প

আঘাতে ভূপতিত যদি কসমোযোনিক গাণ্ডীবে ধরো

হাতঅতি আলো এড়িয়ে চলো যাই শুদ্ধতম আঁধারে।

 

পদাবলী: ০৩

অন্য দিনটাও যায় যায়সঞ্চায়ের বৃত্তিতেঅপেক্ষা

জমাচ্ছি। বিস্ময় এসে বলেদেখেছো কি, কেমন খসে পড়ছে

বুড়ো কুকুরের শরীর থেকে গুচ্ছ গুচ্ছ রোম।

হাসপাতালের বেডে শোয়া অসুস্থ বৃদ্ধার গাল বেয়ে

কেমন গড়িয়ে পড়ে ডালিমের রসবিকারহীন বঞ্চিত

বেদনায়। তার থেকে ভালো চল মানিকমিঞা এভিনিউ

যেকোনো সন্ধ্যায়পূর্ণিমা থাকলে ভালোপাশাপাশি

হাঁটি কিছুক্ষণঅস্থিরতা রেখে করি ভালোবাসাবাসি।

শুকিয়ে যাচ্ছে শিশুর মায়ের স্ফীত বুকক্ষয়ের বৃত্তে

ঘুরপাক খেতে খেতে কাকটি ঢলে পড়ছে লেকের জলে

পৃথিবীর এই কুৎসিত দৃশ্য এড়িয়েআমি শুধু দেখতে

ইচ্ছা করিপ্রেমের শুদ্ধ স্মারকে প্রকাশ্যে খাওয়া দীর্ঘ

চুমুটি। অভিশপ্ত পাথরকে করে পাহাড়ের পৃষ্টদেশ পার,

দেখতে চাইসিসিফাস ফিরছে ট্রাজেডির ক্ষত মুছে।

 

পদাবলী: ০৪

পারলে এসোসন্ধ্যাবেলাঅ্যাক্রোব্যাটিক শেখাবো।

শোনাবো ডেমরা ঘাটের কথা। একটা স্বভাবতইযাকে

বলে তুলতুলে সূর্যলালঅধিকতরো ভিজে গেলো

পূর্বপাশ শীতলক্ষ্যার তলেপ্রমোদ তরীর খুউব ভেতর

অথচ একদিন জৌলুশ ছিলো কী যে! পিঠ ফিরে বসো

যেন কাষ্ঠমিতাট্যাটুমারানি মতো। নাক পরে আপেল

রেখে তাকাওপাখির ঘোলাটে চোখে। দেখছো কিছু!

তেল নুন ছাড়া পিঠে আঁকলাম ঠোঁটভেজা হানিনাট?

বাই দ্য ওয়ে, কাপড় ছেড়েপুরোপুরিচিৎ হয়ে শোও

ক্লিভেজ থেকে সরলমধ্য শ্যালো চিরেপৌঁছে যাবো

নাভীকেন্দ্রআরোদূর! দ্বিখণ্ডিত সাদা পৃষ্ঠা, শোনো

আমি গিমিকবাজআমি নিছকবাজ। শোনোস্বয়ম্ভু

অ্যাক্রোব্যাট, পায়ের আঙুল থেকে ছাড়ো তির! রেখার

শক্তি থেকে আপনিযার আদি অভ্যুত্থানসুপ্ত মঙ্গল!

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post