সাফওয়ান আমিনের কবিতা
অলখে হাসে কথা
রাত ক্রমে রাত হয়ে ওঠে
পাড়ও ভেঙে যেমন হয়ে যায় নদী
ফুল যেন তেমনই ফুল হয়ে ফোটে
জুঁই ফুটে আছে কার অমাবস্যায়?
সেরে ওঠার প্রবল ইচ্ছায় প্যারালাইজড মানুষের মনে
পুরানো বাড়ির ছাদের মতন একা, কুহকের দিনে
সংঘাত বাজে কথার কথায়, কার যে সংগোপনে
শুনছি এখানে আমি মৃতপ্রায় গাছেরও আহ্বান...
চলে গেল দোয়েল, পৃথিবীর ধারণা থেকে দূরে
কার্নিশ বেয়ে সেও কি পালায়? কণ্ঠে তুলে শোক অফুরান
কত দূরে যাওয়া যায় নিজেকে ছেড়ে?
মিডল ফিঙ্গার
তোমার ডানে জীবনানন্দ, কার্ল মার্ক্স, বামে মণীদ্রগুপ্ত
হাতে আধুনিক বাংলা কাব্য পরিচয়। ছাপিয়ে তাদের
তীব্র হয়ে উঠেছে আর্যভট্র,
তোমার পেটের উপর শূন্য কপচাতে কপচাতে,
তোমাকে নিয়ে খেলছে সন্ধ্যা অবধি।
রাতেও খেলবে কিনা ভাবছে, ভাবছে আর্যভট্র ও ব্রহ্মগুপ্ত
তাদের তত্ত্ব চর্চায় তুমি কি বেঁচে আছ?
মলিন পাতার মতো টেঁসে আছ কেন?
টিউশন ফেরত হাবাদের মতো ভস্কে গেছ
সঙ্গম-শোকে থাকা বন্ধুর মুখ যেন
ভাতের ক্ষুধা কি সঙ্গমের চেয়েও কাতর করে?
এই বৃষ্টিস্নাত সকালে, পুঁজির ধারণা থেকে...
বৃষ্টি এলে রোমান্টিক হবো নাকি কিঞ্চিৎ হিসেবি
ভাবনায় পড়ে যাই,
এর চেয়ে তুলনামূলক সাহিত্য তত্ত্বের অধ্যাপক হওয়া ভালো
ভয়টুকু আলাদা করে শিশুর মতো
সুখী ও নিষ্পাপী হয়ে
যদি বৃষ্টির পরশে বিগলিত হতে যাই,
পুঁজির দাসত্বে আধুনিক হওয়া মানুষ মনে আসে;
তবু ওষুধে অসুখ সারে কিংবা
সাপুড়ে যে সাপ অপছন্দ করে না,
তারই বা নিশ্চয়তা কী?
তার চেয়ে বড় কথা,
পুঁজিবাদের প্রসঙ্গের চেয়েও পুঁজি আরও বড়
নগরের অধিক ব্যস্ততা নিয়ে
দৌড়ায় যে বাবা, যে মা ইশকুলের দিকে
তেমনই ব্যস্ততায় পুঁজির ধারণা থেকে
পালাতে চাই
কেউ খোঁজ করো না
রূপকথা
মানুষের অবসাদ কি মাবুদেরই মতো ?
বাবা তাঁর অনুভূতির একআনাও লিখে দেয়নি
অসিয়ত ও নসিহতের প্রসঙ্গও এখানে নেই
মানুষের মতো দাদি মৃত্যুর অনুভূতি আমার নেই
নেই দাদা মৃত্যুর অনুভূতিও!
হাতে নেওয়া ক'মুহূর্তের ফুলের জন্য
যতটা শোক থাকে মানুষের, ততটাও নেই;
নদীর জলের মতো সন্দেহে, কোন্ ছলে? হৃদয়ের তীরে,
কারা আসে তবু?
ওরা কেবল ম্লান হয়ে যাওয়া রূপকথা,
জীবনের পাশে
উন্নয়নের গল্প যেমন ম্লান হয়ে যায় মুদ্রাস্ফীতির কাছে
অন্বয় হও
বিজ্ঞান জানে না যে, সেও কি করতে পারে
অক্সিজেন অস্বীকার? আছে সাধ্য কার?
থাকে না দয়াল, যদি করো তবু এইমতো অবহেলা
জানোই তো, কীটেরও এষণা আছে—
এ সামান্য মানব জনম, আদি পাপ কত আর বয়?
জোয়াল টানা মহিষের মতো ক্লান্ত সে যে,
হও অন্বয়—
তোমার ইশারা
তুলসীপাতার মতো সুখ হয়ে উঠুক অসুখের,
এ দীনের হোক সহোদরা—
যে কবিতাই লিখি, যে দিকেই ঘুরি
কেবলা ঘুরে তোমার দিকে হয়
এতটা মোহে, জাগতিক ইশারায়
আর টেনো না গো
ছিঁড়ে যাবো, শিরকে শিরকে
জন্মের পর যেমন সন্তান তাঁর মায়ের নাড়ি ছিড়ে যায়