শিশির আজমের পাঁচটি কবিতা/ হরকরা প্রকাশন








সুলতান


গাঁয়ের টি-স্টলে এখন আমি বসে আছি
সন্ধ্যায়
যেমন অন্যান্য দিন বসি

শান্ত বনভূমি আর কোকিলের অপমৃত্যু কাগজে লিখে যেখানটায় বসে আছি
তার উল্টো দিকে বসে আছে এক বুড়ো
চোখ বড় বড়
মাথা থেকে ঘাড় বেয়ে নেমে আসা লম্বা খোলা চুল

বুড়োটাকে এই প্রথম আমি দেখছি হ্যা আগে কখনও দেখেছি বলে তো
মনে পড়ছে না
নিশ্চয় এই এলাকার না 
না কি দস্তয়েভস্কির পরিচিত কেউ

ঘন্টা দেড়েক ধরে ওকে দেখছি আর ওর টেবিলে চায়ের কাপ
চা
ঠান্ডা হতে হতে
এতক্ষণে নিশ্চয় জল হয়ে গেছে

লোকটা বোধ হয় বার দুয়েকের মতো চায়ের কাপে মুখ ঠেকিয়েছে
চা কি তেতো
বিশু কাকা কি চায়ে চিনি দিতে ভুলে গেছে

যা হোক লম্বামতো বুড়োটা আমাকে দেখছে
যখন ওর চোখে ধানক্ষেতের ঢেউ আর হেমন্তের আকাশ ভেসে চলেছে
হ্যা আমাকেই দেখছে
কয়েকবার সতর্কতার সাথে ও আমার দিকে তাকিয়েছে
আমি দেখেছি
কেন
আমি তো কখন চা-টা শেষ করেছি
এই চায়ের দোকান এই সামনের রাস্তা এই দু'পাশের বসতবাড়ি
অবলীলায় মুছে ফেলে
আর মোড়ের ঐ বাড়িটাকে তো তিন দিন দেখিনি আমি
কোথায় গেছিলো ও
কোন পাহাড়ে
ঐ মিষ্টি বিনম্র বাড়িটা
আচ্ছা ঐ একা লোকটা খ্যাপাটে পেইন্টার সুলতান না তো
যার ছবিতে স্বাস্থ্যবান চাষী আর জেলেদের অফুরান প্রাণপ্রাচুর্য
আর সুডোল দেহের সুন্দরী মেয়েদের নির্জন হ্রদ
আর কর্মচাঞ্চল্য 
ঐ মেয়েরা বাড়িতে মাছ কোটে ঢেঁকিতে পাড় দেয় পুকুরে শাপলা তোলেে
হ্যা ও তো সুলতান
আমাদের লাল মিয়া
ও তো আমার শেষ করা চায়ের ধোঁয়াগুলোকে
আবার ধরে এনে
টেবিলের ওপর ছেড়ে দেবে
আর সেটা তো আমার জন্য ভারি অস্বস্তিকর হবে
আর বিপজ্জনক






ফাঁস


যে কেউ 
আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে

ইয়ায়োই কুসামা
গত পরশু এই কাজটাই করেছে
ওর সহজ ও নিঃশঙ্ক ডটগুলোকে 
যদি 
কোথাও বিক্রি করে দিতে পারতাম

ডেভিড তৈরির আগে
যে বিশাল দৈত্যাকৃতির পাথরটা বছরের পর বছর ধরে
ক্যাথেড্রালের পেছনের বাগানে পড়ে ছিল
ওটা নিশ্চয় কেউ কেউ দেখেছে
কিন্তু যেদিন মাইকেলাঞ্জেলো আর আমি প্রথম ওটা দেখলাম
আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম
আর
ওটা যে পাথর না
ওর ভেতর যে প্রাণ আছে
ওটা মাইকেল তখনই আমাকে বলেছিল
আমি ফেঁসে গিয়েছিলাম

এখন 
এই রাত এগারোটা উনষাটে
আমার না লেখা কবিতার সঙ্গে একই টেবিলে
আমি বসে আছি
টের পাচ্ছি
টের পাচ্ছি
ও আমাকে ফাঁসাবার ছক কষছে




নেরুদার জাঙ্গিয়া


পাবলো নেরুদা কি কবি ছিলেন?

হয় তো প্রশ্নটা বোকা বোকা হয়ে গেল
তবু এই প্রশ্ন আমি করি
নিজেকে।

আর এটা তো ঠিক যে উনি জাঙ্গিয়া পরতেন না
আর
কোন কোম্পানিও ওকে পেতে চায়নি
জাঙ্গিয়ার বিজ্ঞাপনে।

আচ্ছা জাঙ্গিয়া পরলে রাষ্ট্রের কী উপকার হয়?
সমাজের?
না কি উনি রাষ্ট্রের ক্ষতিই চাইতেন
অথবা চাইতেন সমাজই তৈরি করুক রাষ্ট্র
নিজের মতো
যেখানে জাঙ্গিয়ার দরকার হয় না
বিজ্ঞাপন অপ্রয়োজনীয়
না কি
রাষ্ট্র ব্যাপারটাকেই উনি অস্বীকার করেছেন
করতে চেয়েছেন?






সূর্য উঁকি দিয়ে দেখছে


সকাল ধুয়ে ফেলেছে
তিতে

চেয়ারগুলো অন্ধকার থেকে আলোয়
সরে এসেছে
টেবিলের ওপর ছোঁপ ছোঁপ
রক্ত
গত রাতের মোমবাতির

বিশ্বাসভঙ্গের দায় নিয়ে কেউ জানালাগুলো খুলে দিয়েছে
কে
হয় তো কমনীয় কোন শরীর থেকে এখন তুষার ঝরে পড়েছে
হ্যা
সূর্য উঁকি দিয়ে দেখছে
দেখুক
হয় তো কোথাও পড়ে আছে
জানোয়ারের পশম
হয় তো তোষকের নিচে রাক্ষসের
নরম চোখ

কুয়াশা

হ্যা কুয়াশা কিন্তু কোথাও





চে'র বুকে কার্তুজগুলো


চে গুয়েভারাকে খুন করবার জন্য যে বুলেটগুলো ওর বুকের ভেতর
ঢুকে গিয়েছিল
খুব সহজে
ওরা এখন কোথায়
ওরা কি বেরোতে পেরেছে
ওরা
ঐ  কার্তুজগুলো
না কি রয়ে গেছে আজও ঐ বুকের ভেতর

হয় তো ঐসব কার্তুজ চে'র বুকে সুখেই আছে
কেন না
চে তো জানে কার্তুজগুলো মেহনতি মানুষের
রক্ত দিয়েই তৈরি









শিশির আজম
Shishir Azam

জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮

Post a Comment

Previous Post Next Post