বঙ্গ রাখাল-এর গুচ্ছ কবিতা

 বঙ্গ রাখাল-এর গুচ্ছ কবিতা




তুমি, আমি হয়ে যাচ্ছি


মাটির খুব কাছাকাছিÑশুয়ে আছি

মিশে গেছেÑশরীর; অন্য ঘরে অন্য মানুষ

মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল ঘরে

সন্ধে নামি নামি সময়-দুটো হাত

আমার দিকেÑহিসহিস করে বইছে বাতাস...


রাস্তায় হাঁটার সময়Ñ

পেছনে তুমিÑঅদৃশ্য এক

তালগাছ সরে সরে যাচ্ছে

মন্দির থেকে বের হচ্ছে ধোয়া...

অন্ধকার, জাগায় জাগায় সিদ্ধ গোল আলু গন্ধ...


কথার ফাঁকে কথা হচ্ছে

বেঁকে যাচ্ছে শরীরÑআমার মধ্যে আমি

ছায়া মিশ্রিত আমিÑতুমি হয়ে যাচ্ছি...




মুখোমুখি আমিÑপ্রশ্ন অনেক


দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে তুমিÑ

মেপে যাও সম্পর্কের দূরত্ব

গ্রামীণ জীবন হতেÑনাগরিক

কোনটা অচেনা তোমারÑ

নগরদোলার এই সীমাহীন দোলনীতেÑ

ভেঙে গেছে জীবনের স্বপ্ন...


তবুবাঁচতে চেয়েÑ

নিরন্ন জীবনের ছবি

ভাসে চোখের সম্মুখে...


নিত্য হেট হয়ে আসা মাথা

কখনও কি তুলে দাঁড়াতে পারবে

মৃত্যপ্রায় জরিনা বেগম কিংবা অজস্র নারী...

যাদের জানি অজনগণ বলে...


তোমার ঋণের বোঝা বইতে পারিÑ

সইতে পারি পিঠেÑতোমার দেওয়াছাপ

দগদগে ক্ষত নিয়ে আমিও বলতে পারিÑ

                              বেশ সুখেই আছি।


ফ্ল্যাট আছেÑবাড়ি আছেÑগাড়ি আছে

আশ—পাশে নারীও আছেÑতবুও মর্মান্তিক ক্ষত

জীবন ঘিরে বয়ে বেড়াচ্ছিÑচিরদিন তোমার জন্য

একটু ভালোবাসা পাব বলে।


জীবন বিসর্জনেÑজন্ম তোমার

ঝুলন্ত বিকেলÑ গোধূলি লগ্নে

আধো জোস্নায় ছড়াবে আলো

তবু সিকি আধারেÑ

তোমার মুখোমুখি আমিÑপ্রশ্ন অনেক...



আফ্রোদিতি


সেই শয্যাশাহী

মেয়েটি বুঝে গেছেÑ

জীবনেরমানে।


নদীর স্রোতে

ছড়িয়ে দিলÑ

বৃষ্টির সীমাহীন কাতরতা...


লাল পেড়ে মেয়ের

শাড়িতে শরীর

ফুলেছে বেশÑপোড়া শরীর...


আফ্রোদিতি

নীলনীল আকাশ হংসী

ছড়িয়ে দিল আলো...



চোখ নিভুনিভুÑমন চঞ্চল


সকাল সকাল ঘুম ভাঙল

তোমার পরান ভরে দেখব বলেÑ

বিষণ্ণ হৃদয়ে সারারাত

জেগে জেগে তোমাকেভাবিÑ

শস্যহীন বিরান ভূমিÑকিসের প্রতীক্ষায়

কাটিয়ে দিইÑজীবন

সব অমীমাংসিত জীবনের গোড়ায়

একদিন আমিও রোপিব বৃক্ষ...


গাছপাড়ার মোড়ে তোমার বিরহেÑ

ফুটেছে গোলাপ

মেলেছে আঁখি সুচিত্রা সেন...


ভুল ট্রেনে চড়িÑ দীর্ঘ রঙিন জীবনে আজÑ

আমিও ভেঙে ফেলি শরীরের হাঁড়

কাঠফাটা রোদে পোড়াব বলে...


নিজেকে ছড়িয়ে দেই রোদেÑশরীর তেতে

মুখের কাতরতায়Ñতুমি ভুলে গেলে ভুল...


কান্না যখন ঠোঁটের কোণায়Ñফুলে ওঠে বুক

বন্যতায় নখর বিদ্ধ সময়Ñতুমি হও প্রতিবাদী।


আজকাল অ্যাজমার রোগÑ বেড়েছে বেশ

ছড়িয়ে দিচ্ছি বিষÑঘরময়

কানে বাজে বিপদের সুরÑ

চৌকাঠ ঠেলে আমিই যাচ্ছি চলেÑদূরে...


পাথরের সাথে পাথরের দূরত্ব কত?

কেমন করে স্বপ্ন দেখিÑশান্ত শরীর অশান্ত এখন

সামনে সাইনবোর্ডÑ

‘আছে জীবনের মানে

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকÑসিকি আদরীর মানে’...


রাতে ছামিয়ানা ছড়িয়েÑআঁকলে দুটি ঘর

এক পাশেতে আমি থাকিÑঅন্যতে থাকে বর

চোখগুলো আজ—নিভুনিভুÑমনটুকু চঞ্চল...



নিমগ্ন হৃদয়


রাতের আঁধারে এক অন্ধবালক

জীবনের খাতা খুলেÑলুটোপুটি খায় ধুলোয়

রক্ত দাগে নিজের শৈশব লেখেÑগল্প

রাত—দিন নিজের অজান্তে তুমিÑ

গেয়ে গেলে জীবনের গান...


আমার জন্মের সাথে ছেলেটার বেজায় মিল

রক্তের আহবানে মা, জীবন দিয়ে আত্মগোপনী হয়...


নির্লজ্জ নারীটিও অবিচল থাকতে থাকতে

কষ্টে নিমগ্ন হৃদয়Ñ করে তোলে ভারী...




আমার বাড়ি...


চাইলে তোমাকেও ভুলতে পারি

পাখির মত উড়তে পারিÑনীল দিগন্তে

কোকিল ডাকা সকালবেলাÑঘুম থেকে এক বৃদ্ধ পিতার

হাটতি ধরে হাঁটতে পারিÑআবার আমি।


আমার মধ্যে লুকিয়ে রাখার কৌশল জানি


ঘয়তোকষ্টহবেÑঅনেকখানি

তোমার ছেড়ে যাব কোথায়Ñএটা ভেবে

পথ ভুলেছিÑসকাল সকাল গলির মুখে।

পথের মাথায় আমার বাড়ি

তবু আমি পায় না খুজেÑএকটা বাড়ি

যে বাড়িতে রাখা আছেÑবাবার তোমার হাতের ঘড়ি

Ñমায়ের চুড়ি...

এই বাড়িটাই আমার বাড়ি

সব থেকে যা অনেক দামি।

















Post a Comment

Previous Post Next Post