সাগর ইসলামের ‘চিঠি’

 চিঠি: সাগর ইসলাম




প্রিয় বিজন্মবোধ,


প্রথমেই আমার ঘৃণাঘ্রাণ নেবে। আশাকরি তুমি 'খান'-এর সাথে 'কি' যোগফলে ভালো আছো। তোমার যোগের অধ্যায় শেষে আমি জঘন্যত্তোর বিয়োগ সুন্দরে আছি। কী দিয়ে শুরু করবো জানি না। কিছু না জানলে আমার গালি আসে, সে তুমি জানো। সে গালি দিয়েই শুরু করছি। ওরে, কপালচুদি, মা ভালো নেই সে তুমি বাবার মতোই জানো! তারপরও চিঠিতে জানতে চেয়েছো, 'আমি কেমন আছি, কি রকম গেল এবং যাচ্ছে জীবন?' তুমি তো বিড়ালপঙ্গু ঘরে ইঁদুরের বাচ্চা, ঘর ছুচোমেচিতে রাখতেছো তাই খরগোশগতী সাহস! তাহলে বলছি শোনো...

ছোটো থেকেই আমার প্রতি বাবার স্বপ্ন ছিলো আকাশ-সংসদ সমান। ডিগ্রীর সিঁড়ি বেয়ে সেখানে আমি নাকি পকেটে থাকা কলমঘুমে খুব আড়ামে পৌঁছে যাবো। অথচ কলমঘুম তো দূরে থাক, যে বই লাইব্রেরী পায় না সে বইয়ের পাতায় ঝালমুড়ির স্বাদ টুকুও নিতে পারিনি কখনো তোমার শিক্ষাসিস্টেম কেনাবেচা দেশে। তাই পড়ালেখা শেষ করে সবার আগে চাকুরী নয় খুনী হলাম, বাবার স্বপ্নের!

তুমি যে দেশে আমায় ফেলে রেখেছো তার নাম শিখেছিলাম বাংলাদেশ। যাকে আমি আমার বিদ্যা দিয়ে ডাকি, ভাঙলাদেশ! ভাঙলাদেশে ভাঙা ছাড়া কোনো রাষ্ট্রোন্নতি নেই। এখানে কবর থেকে আসমান পর্যন্ত যা আছে, সব ভাঙে! আমিও ভেঙেছি গ্রামের সালিশে বসা একমাত্র চোরের অজস্র অপমানবোধের মতো!

এই ভাঙা জীবন খুঁটে খুঁটে কতো আর জোড়া দেয়া যায়? তবুও দিয়েছি জোড়া। কখনো সম্পর্ক দিয়ে, কখনো প্রেম দিয়ে, কখনো ভালোবাসা, বিশ্বাস, ধৈর্য্য, সহনশীলতা, কর্ম ইত্যাদি হাবিজাবি যতো মানবসরঞ্জাম আছে মানুষঘরে! কোনোটাই ঠিকঠাক লাগেনি কোথাও।

ভাতের অভাবে সারাদিন পানি খাই, দারিদ্র অঙ্গনলে প্রেসাব বের নাহয়ে বের হয় ফোঁটা ফোঁটা সমস্যা! এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিদিন এ, ও, আপনি, তুমি মুখভর্তি কথা দেয়। অবশেষে পরিস্কার ভাবেই দেখি- মানুষের সাফ সাফ কথা আরো বেশি ময়লা! এসব ময়লা কথা সাদা জীবনে মেখে দিনদিন কী সুন্দর কুৎসিত জীবন আঁকছি তা কোনো অভ্যুত্থানে ছাপা হয়নি। হবেও না কোনদিন। সরকারি ক্ষমতার ভিড়ে দরকারি রাজনীতি এখানে খোদা প্রেমের উপর কোঠায় থাকে।

মানুষাকাশের শকুন কাহিনী বলতে পাখি ভেবে কতো মানুষের কাছে যাই, অতঃপর দেখি সেসব পাখির কোনো ডানাতেই মানুষের বাতাস নাই! শুদ্ধতার বৃথা ওড়াউড়ি শেষে ঝড়া পাতার গাড়িতে নিজের কাছে ফিরে আসি। আজকাল নিজেকেও নিজের কাছে বসতে দিতে মন চায় না। একা থাকতে চাই। খোদা মস্তিষ্কে জ্ঞান ও স্মৃতির খোঁয়ার গেড়ে দিয়েছেন বলে পালধরে গরু চুরি করতে পারলেও গরুর মতো একা হতে পারি না। একা না হতে পারা জীবনে রাখি পারিবারিক পার্কের মতো সন্দেহ। পারিবারিক পার্কের ভেতর পরিবারের আঙুলগুলো বাইরের কার কোন আঙুল ধরে আছে কে জানে? এর চেয়ে বড় কথা -দোষ তো আঙুলের নয় স্পর্শের!

আজকাল কিংবা পরশু, ভালো লাগে না। মন্দও লাগে না। ভালোমন্দের মাঝখানে সব শুক্রবারের চেয়ে বড় বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার লাগে! খোদারে বলি, 'ও খোদা- তুমি কি আমার ঋণাত্বক হওয়া সম্পর্ক বারের একদিন আগে আগে চলো, পিছনে মানুষরাতে কি হয়ে গেলো দেখো না?' বিষন্ন বৃহস্পতিবার রাত-জীবনে আমি তো মানুষের হাতে মদের বোতল হতে চাই। অথচ মানুষবাজার আমায় শুক্রবারের খোলা লবণ বানিয়ে রাখলো। মদের পরিবর্তে রান্নার অভাব দেখিয়ে এখন মানুষ আমাকে খায় টুকে টুকে, কেউ খায় ছিটিয়ে, কেউ আবার একটু চেকেই ফেলে দেয়!এসবের কোনো কিছুই জানলে না তুমি? জানবে না তুমি? খোদা, আসলে তুমি খোদা নাকি শুক্রবার? মানুষ ছুটি কাটালে মানুষের সাথে তুমিও কাটাও ছুটি!'

আজ আর নয়। আর কি বলবো তোমারে? কি বলা যায়? তুমি তো তোমারে নিয়ে খেলতে নেমে আমারে বানাও ফুটবল। লাত্থি দাও। গোলবারের কাছে গিয়ে এমন জোরে কিক করো যা আমার আত্মসম্মানবোধে আঘাত করে। তুমি উল্লাস করো আর আমি আত্মসন্মানবোধের আঘাত নিয়ে গোল হয়ে যাই! এই পৈশাচিক আনন্দে তুমি আমায় আর কতো গোল করবে?
করতে থাকো তুমি। আমি ফেটে গেলে তুমিও শ্লা মরা মেসি!

ইতি
বিজন্মাবধী

Post a Comment

Previous Post Next Post