Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সামতান রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

সামতান রহমানের একগুচ্ছ কবিতা




আলো-ই তোমাকে অন্ধ করে দেবে

মানুষ একদিন পাগল হয়ে যাবে
অন্ধকারের জন্য।
এক টুকরো অন্ধকার
হবে বহুমূল্য,
প্রজ্বলিত পৃথিবীতে
এক ইঞ্চি অন্ধকার
কিনতে,
টন টন স্বর্ণ নিয়ে ঘুরবে মানুষ।
বিশ্বস্ত দোকানগুলি থেকে
উচ্চমূল্যে
প্যাকেটজাত অন্ধকার কিনে
ক্রমাগত
ঠকতে থাকবেন সর্ববিশারদ।
ডিসকালার অন্ধকার
কিনে
বার বার
ধরা খাবেন ঝানু স্মাগলার।
ব্লাকিংয়ে গিয়ে
ফেঁসে যাবেন, চিরচোরাচালানকারী...
চোখের অসুখের হাসপাতালে
ভরে উঠবে পৃথিবী।
যারা থাকবেন ডাক্তার তখনও
ধীরে ধীরে হয়ে পড়বেন
দৃষ্টিহীন তারাও,
নিজের দেখাদেখি নিয়েই
থাকবেন চিন্তাবিদ্ধ তারা।
আলোর গ্রাসে যাবে সব,
আলোর দখলে যাবে সব
আগ্রহ ও অগ্রসর,
অসহ্য আলোর ঝলকানি
থেকে
অবশিষ্ট থাকবে না
কোনো ব্যক্তিগত গহীন ও গোপন।
সর্ববস্তুর অতিঅভ্যন্তরে,
কোষে প্রকোষে
জ্বলে উঠতে থাকবে
সংগঠিত আলো,
দেখতে চাওয়ার প্রোজ্জ্বালা,
প্রাযুক্তিক বাতি-বাহারে।
সে জ্বলন নিতে হবে, নির্দোষেরও।
দেখতে পাবে যে সামান্য সংখ্যক,
অধিকাংশের অভ্যাসে
সে সামান্যরাও
খুলতে পারবে না চোখ,
অবারিত আলোস্ফুলিঙ্গে
বস্তু হারিয়ে যাবে, দৃশ্য থেকে।
আঁধার জ্বালানো ডার্কার
বিক্রি হবে
অভিজাত মলগুলিতে,
বড় বড় বড়লোকেরা
বিশেষদৃশ্য মুড়িয়ে
সিগারেট খাবেন
ডার্কার দিয়ে ধরিয়ে।
আলোয়ভষ্ম দৃশ্য,
ডার্কার দিয়ে ধরিয়ে
সিগারেট টানলে,
অল্প কালো ধোঁয়ায়িত অন্ধকার
বেরিয়ে আসবে,
এখন তামাকের সিগারেট থেকে
যেমন বেরোয়, সাদা।
নক্ষত্রগুলিকে
প্রোজ্জ্বলিত করে দেবে মানুষ।
পৃথিবী জ্বলতে থাকবে
সার্বক্ষণিক ও সর্বত্রই
আলোতে।
লক্ষ কোটি মেইডেড সূর্য
দাপিয়ে বেড়াবে
জগত মহাজগত।
সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণের মত
শতাব্দিকাল পর
কোনো এক মহামুহূর্তে,
কোনো এক নির্দিষ্ট অঞ্চলে,
গ্রহগতি থেকে
নেমে আসে যদি
ক্ষণিকের অলংঅন্ধকার,
শুধু তখনই
কেবল তখনই
বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে
মেতে উঠবে
মানুষ ও প্রাণীসমুদয়।
আর কোনো উৎসব পার্বণ
কল্পনাও করতে পারবে না কেউ।
কোটি পর্যটকের সমাগম হবে
সেই অঞ্চলে,
যেখানে সামান্য
অন্ধকারের সম্ভাবনা দেবে দেখা।
গরীবরে
কিস্তিতে, লোনে
অন্ধকার দেখাবার আশ্বাস দিয়ে
মাঠে নেমে পড়বে অনেক
এনজিও ট্রাস্ট।
তৈরি হবে অন্ধকার ব্যাংক,
যারা লোপাট করে নেবে
মানুষের অন্তিম আড়াল,
অনেক প্রথমআলো
জন্ম নেবে
অকস্মাৎ,
কোথায় কে তাকাবে, ঠিক করে দিতে।
মূলধারার
সাহিত্য হবে অন্ধকার সংক্রান্ত।
বেসিক আর্ট বা কলা হবে
কৃত্রিম অন্ধকার সৃষ্টি ও সৃষ্টি প্রয়াস।
প্রধান কৃষি ও কৃষিকাজ হবে
অন্ধকার উৎপাদন।
অন্ধকারের স্বপ্ন দেখিয়ে
ক্ষমতায় যাওয়া রাজনৈতিকদলগুলি
ব্যর্থতার দায় নিয়ে হেটে যাবেন
পদত্যাগে।
এত বাতি জ্বলছে
জগতে,
এত বাতি জ্বলবে
জগতে,
শক্তির ব্যয়
আলোতে হবে এত রিত,
এক ইঞ্চি গহীনও
থাকবে না
কোনো দূরে, কোনো একান্তরে।
হবে বহু সূর্যের পৃথিবী,
হবে বহু সূর্যের দেশ,
প্রতিটি শক্তিশালী দেশেরই থাকবে
নিজস্ব সূর্যসম্ভার,
সূর্য স্থাপন করতে
কক্ষপথ নিয়ে
দেশে দেশে হবে
প্রাণঘাতী যুদ্ধ।
কারো কারো ব্যক্তিগত
সূর্যের সংখ্যাও হবে গণনাঅতীত।
তখন কেউ কারো চোখ
উপড়ে ফেললে,
সদ্য চোখমুক্ত লোকটি
কৃতজ্ঞতায় কেঁদে ফেলবে
রক্ত,
উপকারে নুয়ে আসবে তার সমগ্র মত ও মাথা।


 কলকি

নিডালিয়ার
তিনটা চড়ুই
উড়ে এলো
মনে,
আজ কি তবে
দেখা হবে
দেখা নাই যার সনে?
ঘটনা কী জানো?
গাঁজার কলকি
মাজায় লইয়া,
ঘোপে ঘাপে টানো!
উড়ালিয়ার
একটি আঘাত
ফিরিয়ে দিলাম
আজ,
ডালে পাতায়
গাছ হয়েছি
বলবে কে এ সাজ?
ঘটনা সব জানি...
গাঁজার কলকি
মাজায় লইয়া,
ঘোপে ঘাপে টানি।



অমরত্বের রয়েছে সম্ভাবনা
মঞ্চ সাজাও... এটাও করো নগরকেন্দ্রের কেন্দ্রস্থলে, আমি আজ উঠবো নিজের ফাঁসি নিয়া। তৈরি হও... রায় প্রতাপ সোচ্চার যে রূপে হয় সক্রিয়, আমি আজ অপরাধ স্বীকারে যাচ্ছি। নিজেকে আজ ফাস করে দেবো। আজ আমি গণিমত হবো। লুটিয়ে দেবো আজ আমি আপন প্রতিরক্ষা। এই প্রথম একটি অন্তরঅভ্যন্তর তোমরা দেখতে পাবে। ভেতরে যা যা হয়, বাইরে তার কী কী দেখায়, দেখতে পাবে। তল্লাশির চিরুনি রাখো প্রত্যাহার করো ধরবহর। আক্রোশ তবিয়তে ধরে বিচার দণ্ডায়ে এসো। আমি আজ সাব্যস্ত হবো, আমি আজ রায়স্থ হবো, ধূলিসাৎ হয়ে যাবো আমি আজ তোমাদের ন্যায় ও ন্যায্যে। আর্জি শুধু এই, আমার জল্লাদ যেন আমার অপরাধ জেনে নেয়।



মুহূর্তযোগী

মায়ের কোল ছিটকে গেছে সন্তানের ভবিষ্যত থেকে,
পিতার হাতে আজলা জলে ডুবে মরছে সাবধানের শিশু...
হাহাকার করে হওয়া সমব্যথীর যাতাকলে মাথা পেতে আছে জীবনের আশা।
আমাকে আমার বিচার করতে হবে, এরচে' অবিচার আর কী হতে পারে?
নিজের জেলখানা পাততে অন্যের দুয়ারে দুয়ারে রায় খুঁজে ফিরছি।
একটা জানালার চেষ্টাও করছি যেনো, আপন সমাধি দেখা যায়।
মাত্রই জেলফেরত এক কয়েদির প্রতিবাদে যে পাখিটার পাখা পুড়ে গেলো,
সেও একদিন জানতে পারবে তার অপরাধ, সুন্দর আর স্বর্গ মানুষ পরিপন্থী।
দশদিকে মাইক, একাদশদিক কাঁপছে, হবে কি হবে না যে চতুর্দিক, সেদিকেই দাঁড়াও।
সবকিছু পুড়ে গেছে আগুনের অভাবে, সবকিছু ভেসে গেছে খরায়,
একটা পাখার জন্য কেঁদে কেঁদে উড়ে গেছে অনেক পাখাতুর মেয়ে...




নতিক্রিয়া
দেখছি। দেখেই যাবো... কিচ্চু বুঝব না, দেখার থেকে দূরিয়ে দিয়েছি বুঝপারা। শুনছি। শুনেই যাবো... কিচ্চু বলবো না, শোনার থেকে সরিয়ে রেখেছি খবরাখবর। ভাবছি। ভেবেই যাবো... কিচ্চু করবো না, ভাবনার থেকে বের করে নিয়েছি করাকরি। দেখে শুনে ভেবে এমন থাকবো-- মুখ ছিলো একথা বলবে না কেউ!



All reaction

Post a Comment

0 Comments