বিজিতের বাইবেল/ আদিত্য আনাম/ আলোচনা/ কবি: হাসনাইন হীরা

 

 দরকারি কবিতার বই বিজিতের বাইবেল/ আদিত্য আনাম/ আলোচনা/ কবি: হাসনাইন হীরা






দরকারি কবিতাগুলোই লিখে চলেছে আদিত্য আনাম। একবিংশ শতাব্দির গোড়ার কবিতায় যে চিহ্নগুলো চিহ্নিত হওয়া দরকার, তারই উজ্জ্বল খতিয়ান 'বিজিতের বাইবেল'। 

প্রশ্ন হলো, একবিংশ শতকে কবিতার কাজ কি?

আমার ধারণা, ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে আক্রান্ত পৃথিবীর ফুসফুসে খানিকটা শুশ্রুষার বাতাস বইয়ে দেওয়া। সে কাজটিই করে চলছে আদিত্য আনাম। তাঁর অন্যান্য কবিতা গ্রন্থের মতো বিজিতের বাইবেলেও সে নিদর্শন আছে। যেখানে আদিত্য বলতেছেঃ

  

‘খোদা, জীবন কি একটাই? 

দেখেন তো আরও দু'একটা আছে কিনা! 

আমাকে যেটা দিয়েছেন, সেটা তো নষ্ট!’

 

লক্ষ্য করুণ, স্বয়ং কর্তাকেই প্রশ্ন। একেবারে ক্ষমতার কেন্দ্রকে ভেঙে দেওয়ার প্রয়াস। এটা একই সাথে আধুনিক ও উত্তরাধুনিক কনসেপ্ট। তবে প্রশ্ন করেই থামেননি। প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন। কেননা, আদিত্য হয়তো জানেন, কর্তৃত্ব আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে। তাই মানুষের ইচ্ছার স্ফূরণের চেয়ে ঈশ্বরের আদেশ মানাই শ্রেয়। 

এখানেও একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, ঈশ্বর তো নিরাকার, বায়বীয়। তো নিরাকারের কাছে আকারিক জীবনের সুরাহা কি সম্ভব? তারচে সভ্যতার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে এমন রাজনৈতিক প্রতিভূদের কাছে করলেই তো আরো বেশি কার্যকর ও বস্তুগত হতো। কারন, বহু আগেই তো মানুষের কর্তৃত্বের ধারণা ঈশ্বর কেন্দ্রিক থেকে বদলে গেছে। মানুষ এখন তাঁর নিজের ইচ্ছার উপরেও কর্তৃত্বের ভার নিতে পারে। কিন্তু আদিত্য সেদিকে যায় নি। সচেতনভাবেই যায় নি। কারণ,  আদিত্য জেনে গেছে,  মানুষের জীবন এখন নষ্ট। রাজনৈতিক প্রতিভূরা যে জীবন ধারণ করে আছে,  তা নষ্ট। সুতরাং তার কাছে চাওয়ার কিছু নাই। 

আদিত্য বলতেছে, 

‘মানুষ আজ মানুষের কাছে হেরে গেছে’

অথবা

‘পৃথিবীকে পৃথিবীর বাইরে বের করে দিয়ে 

এখানে বসানো হয়েছে বাজার ও বাঈজিদের হেরেমখানা।’

 

আদিত্য আরো বলতেছে, 

‘পৃথিবীটা কারাগার—দেয়ালজুড়ে ক্ষত

ফুলগুলো ফুটে আছে আসামীর মতো।’

এইসব পরিস্থিতির ভেতর জীবন ও জগত সম্পর্কে আদিত্যর পর্যবেক্ষণ হলো—

‘গাছের ভিতরে ঢুকে কাঠ হয়ে বসে আছি আমি আর

আমার ভিতরে বসে আছে এক সুদক্ষ ঘুণপোকা।’  

সুতরাং একটা সংকটময় সময়ের মুখোমুখি এই কবি নিজের একটা পৃথিবীকে অনুসন্ধান করে চলেছেন বলেই এত কথা, এত পীড়ন, এত দ্রোহ ও প্রত্যাশার উদ্বেগ যা এই সময়ের উপকণ্ঠে এক উজ্জ্বল আত্মদর্শন বলেই মনে হয়। 

বাংলা একাডেমি আয়োজিত সদ্যই শেষ হওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫-এ শিল্পী আল নোমানের করা প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা হরকরা প্রকাশন। বইটি রকমারি.কমসহ অন্যান্য অনলাইন (বিক্রয়) মাধ্যমগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে।


                                                                  - হাসনাইন হীরা, কবি  

Post a Comment

Previous Post Next Post