আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ্যবর্তী হাইফেন/ মাহবুবা করিম / আলোচনা / মুহাম্মদ ইয়াকুব

 আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ্যবর্তী হাইফেন/ মাহবুবা করিম / আলোচনা / মুহাম্মদ ইয়াকুব



মাহবুবা ক‌রিম এই সম‌য়ের প্রতিশ্রু‌তিশীল কবি। তার ক‌বিতায় শব্দ চয়‌নে অ‌ভিনবত্ব, উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং রূপক-প্রতী‌কে নতুনত্ব, চিত্রক‌ল্পের বাস্তবতা, ভা‌বের অতল গভীর অনুভূ‌তি যে কো‌নো কাব‌্যপিপাসু হৃদ‌য়ের তৃষ্ণা মিটা‌তে সক্ষম। হরকরা প্রকাশনী থে‌কে তার সদ‌্য প্রকা‌শিত "আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফেন" কাব‌্যগ্রন্থ‌টি বরাব‌রের ম‌তোই স্বতন্ত্র ও ব‌্যতিক্রমধর্মী মেজা‌জে উপস্থা‌পিত হ‌য়ে‌ছে। গদ‌্যধর্মী গ্রন্থ‌টি আপাদমস্তক ‌বিশ্বাস-অ‌বিশ্বা‌সের দ্ব‌ন্দ্বে মরমবাদী ভা‌বের নাথময়‌প্রেমকাব‌্য। মাহবুবা ক‌রি‌মের কাব‌্যভাষা নি‌র্মিত হ‌য়ে‌ছে হতাশার তরঙ্গ‌বিক্ষুব্ধ ঢেউ‌য়ের উপর - অনাথ দা‌ঁড়ি‌য়ে আশার বীজ বুন‌নের মাধ‌্যমে। ধূ ধূ শূন‌্য মা‌ঠের উপর দাঁ‌ড়ি‌য়ে ক‌বি লি‌খে‌ছেন,-
"একটি ‌নিয়ন্ত্রণহীন ঘোড়ার ন‌্যায় দৌঁড়া‌তে
দৌঁড়া‌তে আমার ঠিক দাঁড়ি‌য়ে পড়‌তে ই‌চ্ছে
কর‌ছে সর্বহারার সব পথ অ‌তিক্রম ক‌রে
অমাবস‌্যায় যাওয়া বিস্তর মা‌ঠের উপর।"
পৃ‌থিবীর মর্মবেদনার অ‌গ্নিলাভা দে‌খে দুঃখ ভারাক্রান্ত ক‌বিহৃদয় আনাগত‌দের আগমনী বার্তায় শিউ‌রে ও‌ঠেন। এক অ‌নি‌শ্চিৎ যাত্রাপ‌থের অ‌ভিষ‌্যৎ দে‌খে ক‌বি নি‌ষেধ ক‌রেন ফুল-পা‌খি‌দের,-
"‌হে অনাগত শিশুরা (জান্না‌তের নীল পা‌খি ),
আকাশ থে‌কে এইখা‌নে ভ্রম‌ণে এ‌সো না।
তোমা‌দের বাস‌যোগ‌্য নয় এ ধরা।"
আধ‌্যা‌ত্মিক চেতনায় সমৃদ্ধ এই কাব‌্যগ্রন্থ বারবার পাঠক‌কে নি‌য়ে যা‌বে এক ভিন্ন জগ‌তে, যেখা‌নে আত্মার খোরাক পাওয়া যা‌বে। সূফীবাদী ভাবতত্ত্ব এখা‌নে প্রাস‌ঙ্গিক হ‌য়ে উ‌ঠে এ‌সে‌ছে বারবার,-
"‌হে আমার যৌবন/হে আমার ভূখা যৌবন/হে
আমার দস‌্যু যৌবন/আ‌মি কি নিয়ন্ত্রণ
হারা‌চ্ছিলাম?"
"আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফেন"এ ক‌বি মাহবুবা ক‌রিম প্রভুর সা‌থে মান-অ‌ভিমা‌নে মে‌তে ওঠে‌ছেন। ‌প্রেমাতুর হৃদয় উন্মুক্ত ক‌রে ক‌বি প্রার্থনায় ব‌সে‌ছেন,-
"‌প্রেম তো ক্ষুধা‌র্তের আহার। প্রেমের ক্ষি‌দে জাগ‌লে
তোমার কি উ‌চিত নয় অসহা‌য়ের হৃদপা‌তে কিছু
সু‌খের মুদ্রা ফেলা?"
প্রেম প্রশ্নে ইশ্বর‌কে প্রশ্নবা‌নে জর্জরিত ক‌রে‌ছেন ক‌বি মাহবুবা ক‌রিম। প্রেমে‌র মর‌মে মরমী ক‌বি ইশ্ব‌রের প্রতি ছুঁড়ে দি‌য়ে‌ছেন জ‌টিল ‌কিছু প্রশ্নমালা,-
"যা আমা‌কে পোড়ায় এ কথা কী ক‌রে তোমা‌কে
পী‌ড়িত কর‌বে ঈশ্বর? তু‌মি তো একা। প্রেমের
দুঃখ‌বোধ-সুখ‌বোধ জা‌নে কেবল যে প্রেমে
ম‌জে‌ছে। তু‌মি তো এমন মর‌মে ম‌রো‌নি। বির‌হের
রা‌ত্তি‌রে বিশা‌দের পেয়ালা হা‌তে দেউ‌লিয়া হও‌নি
কখনও। যে ম‌র্মে যে পী‌ড়িত নয় সে কী ক‌রে
বো‌ঝে আগু‌নে ঝাঁপ দেয়াও প্রেমি‌কের নীরবতার
চে‌য়ে শা‌স্তির?"
এখা‌নে উ‌ঠে এ‌সে‌ছে না পাওয়ার যাতনা। বিরহ-‌বেদনার বাস্তব প্রতিচ্ছ‌বি অ‌ঙ্কিত হ‌য়েছে মাহবুবা ক‌রিমের ঐ‌তিহা‌সিক মিথাশ্রয়ী ভাবনায়,-
"আ‌মি যেন ইভ - স্ব‌র্গের শেষ প্রা‌ন্তে প‌ড়ে আ‌ছি/
আমা‌দের দেখা হয়‌নি আ‌দৌ।"
‌বিশ্বাস-অ‌বিস্বা‌সের দ্ব‌ন্দ্বে মাহবুবা ক‌রিম খুঁ‌জেন প্রেম‌ এবং প্রেমিক‌কে। প্রেমি‌কের সন্ধা‌নে ক‌বিমন কখ‌নো বিশ্বাসী হ‌য়ে ও‌ঠে, কখ‌নো ফের অ‌বিশ্বাস দোলা দেয় ম‌নে,-
"সারা‌দিন দি‌শেহারা পথভ্রষ্ট মু‌মি‌নের ম‌তো স্মৃ‌তি
হাত‌ড়ে ব‌্যর্থ চ‌্যাপ‌লিন হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে?
অভা‌বে-অভা‌বে, ভেত‌রে-‌ভেত‌রে, ক্রমশ ছিঁড়ে
ছি‌ঁড়ে যা‌চ্ছি মৃদু মৃদু ঢেউ - আবার ফি‌রে
আস‌ছিলাম আশ্রয় ভে‌বে।"
এখানকার চিত্রকল্প, উপমা-উৎ‌প্রেক্ষা, ভাষার প্রাঞ্জলতা অগ্রাহ‌্য করবার দুঃসাহস কো‌নো সমা‌লোচ‌কের হ‌বে কিনা, তা স‌ন্দেহ করার য‌থেষ্ট অবকাশ আ‌ছে। এখা‌নেই মাহবুবা ক‌রিম স্বতন্ত্র এবং অনন‌্য ক‌বিপ্রতিভা।
অপ্রা‌প্তির সীমাহীন দুঃ‌খে ক‌বি লীন হ‌য়ে যান বিষাদ সমু‌দ্রে,-
"আ‌মি ক্রমেই লুট হ‌য়ে যা‌চ্ছি দুঃ‌খের অধী‌নে।"
ক‌বির অ‌বিশ্বা‌সে দোলা দেওয়া ম‌নে ফের জে‌গে উ‌ঠে বিশ্বা‌সের মিনার। সুউচ্চ মিনার থে‌কে ক‌বি দে‌খেন সম্ভাবনার আ‌লোকপ্লাবন। আ‌লো দে‌খে ফ‌রিয়াদ জানান,-
"কাউ‌কে বেঁধে রা‌খে মানু‌ষের সে শ‌ক্তি নাই, তবুও
অদৃ‌শ্যে মায়ার দ‌ড়ি পাকা‌চ্ছি। এমন এক‌টি
জোয়ার দাও প্রভু দু`জ‌নে ভে‌সে যাই..."
নি‌জের সুপ্ত বিশ্বাস‌কে সুদৃঢ় প্রকাশ‌্য বিশ্বা‌সে রূপান্ত‌রিত করার অনন্ত প্রয়াস ফু‌টে উ‌ঠে মাহবুবা ক‌রি‌মের কাব‌্যভাষায়,-
"অ‌তি কটু কথা জে‌নেও ব‌লি/আপ‌নি চাই‌লেই
অ‌বিশ্বাস‌কে বিশ্বা‌সে রূপান্তর কর‌তে পা‌রেন/
আমা‌কে আ‌স্তিক হবার সু‌যোগ থে‌কে ব‌ঞ্চিত
কর‌বেন না প্রভু"
সকল প্রকা‌র অ‌বিশ্বা‌সের দোলাচল ভে‌ঙে বিশ্বা‌সের ভি‌তে হাওয়া লাগ‌লো। অব‌শে‌ষে নাথ এ‌লো। ক‌বি আ‌রো বিশ্বাসী হ‌য়ে উঠ‌তে চান। বিশ্বাস‌কে বু‌নোহাঁ‌সের ম‌তো সাঁতরে দুই কা‌ঁধে সাদা পালক বি‌ছি‌য়ে প্রো‌থিত কর‌তে চান গভীর থে‌কে গভী‌রে,-
"এ‌সেছ যখন এ‌সো, যত কা‌ছে এ‌লে সংশয় উ‌ড়ে
যায়; যত কা‌ছে এ‌লে জীবনে সাঁতরা‌তে থা‌কে
বু‌নোহাঁস; যত কা‌ছে এ‌লে কাঁ‌ধে এসে ব‌সে
শুশ্রুষার সাদা পালক; যত কা‌ছে এ‌লে থে‌কে
যাও শুধু তু‌মি...তু‌মি...ত‌ু‌মি।"
এই বিশ্বাস‌কে ক‌বি খুব কাছাকা‌ছি চান। ক‌বি চান, হৃদ‌য়ের কোরআন খু‌লে জলধারায় বিমগ্ন মা‌ছের ম‌তো ঠুক‌রে ঠুক‌রে প্রেমিক পাঠ করুক বিশ্বা‌সের অমূল‌্যগ্রন্থে প্রস্ফূ‌টিত শাপলার বুক,-
"হৃদ‌য়ের কোরআন খু‌লে ময়ূ‌রের পাখনা হ‌য়ে
বু‌কের উপর শু‌য়ে আ‌ছে। ‌যেন জলধারার
সংগীতে বিমগ্ন মা‌ছেরা শাপলার বুক ঠুক‌রে
দি‌চ্ছে।"
‌ক‌বি ক্রমশই বিশ্বাসী হ‌য়ে উঠ‌ছেন। প্রেমিক এসে‌ছে। বহু‌দি‌নের তৃষ্ণায় কাতর উ‌ঠো‌নে জলধ্ব‌নি বে‌জে ও‌ঠে‌ছে। বিশ্বাসী হৃদয় অ‌বিশ্বা‌সের দ্বিধা-দ্ব‌ন্দ্বে দীর্ঘ বি‌চ্ছিন্নতায় এখন ক্ষুধার্ত হাঙর। অনন্তকা‌লের মন্বন্তর শে‌ষে অঞ্জ‌লি ভরা অমৃত অম্লজ‌লে তৃপ্ত ক‌বির বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হ‌য়ে ও‌ঠে,-
"আ‌মি ক্ষুধার্ত হ‌াঙর, অন্তর চৌ‌চির ছি‌লো
কা‌মের তৃষ্ণায়, সে হ‌াত ভ‌রে কাম ঢালল
কণ্ঠনালী‌তে।"
ক‌বি মাহবুবা ক‌রি‌মের ক‌রি‌মের কাব‌্যভাষা প্রাঞ্জল, উপমা প্রয়ো‌গের দক্ষতা মোহনীয়, রূপক-প্রতী‌কে অনন‌্য। তার ভাবনার বীজতলায় তৈরী কাব‌্যালঙ্কা‌রে কাম ও কে‌ৗমাচার একাকার হ‌য়ে যায়,-
"যে একবার নদীর শোভা গি‌লে‌ছে, ঝরনার
পাদ‌দে‌শে জ‌লের ফেণা শরী‌রে মে‌খে‌ছে, তনুর
খাঁ‌জে রে‌খে‌ছে সাতান্ন পদ্ম, যে হে‌ঁটে‌ছে পাহাড়
ডি‌ঙি‌য়ে গঙ্গার তী‌র শেষ পথ ও আয়ুর রেখা
জু‌ড়ে।"
মাহবুবা ক‌রি‌মের কাব‌্যশৈলী যে কো‌নো পাঠক‌কে মোহা‌বিষ্ট কর‌বে। রা‌তের পাপ‌ড়ি উ‌ন্মোচ‌ণের জ‌টিল রহস‌্যময় বিষয়কে খুব সহ‌জে উপস্থাপন কর‌তে পারাটাই যেন তার শিল্পদক্ষতার অনন‌্য ন‌জির,-
"‌তোমা‌কে আরও অ‌ধিক শি‌থিল হ‌তে বল‌লে,
আ‌মি তোমা‌কে রা‌তের পাপ‌ড়ি উ‌ন্মোচন -
স্বচ‌ক্ষে দর্শনের আহ্বান করব।"
নাথপ্রেমময় এই কাব‌্যগ্রন্থ কাম-আ‌বেদনপূর্ণ। কাম‌কে শৈ‌ল্পিক প্রলেপ দেওয়ায় মাহবুবা ক‌রিম সিদ্ধহস্ত। নাথ‌জিহ্বার কারুকাজ‌কে দারুণ ব‌্যঞ্জনায় ফু‌টি‌য়ে তো‌লে‌ছেন ক‌বি,-
"ধরা যে‌তে পা‌রে তার জিহ্বার অগ্রভা‌গে অমৃত
রাখা ছি‌লো; নি‌ঃশে‌ষিত এক‌টি বিন্দুও শু‌ষে
নিলাম।"
যাবতীয় নেশা‌কে সুরায় উপমা‌য়িত করার প্রাচীন রী‌তি কাব‌্যসা‌হি‌ত্যে সর্বজন‌বি‌দিত। প্রাচীন থে‌কে মধ‌্যযুগ, মধ‌্যযুগ থে‌কে আধু‌নিক বা উত্তারাধু‌নি‌কেও সুরা কাব‌্য সা‌হি‌ত্যের অ‌নিবার্য নেশা উপ‌মেয়। ক‌বি ব্ল‌্যাক লেব‌লের গোলগাল বোত‌লজাতীয় পাত্র থে‌কে পান করা অমৃ‌তে নেশায় বুদ হ‌য়ে যাওয়ার বিষয়‌টি প্রকাশ ক‌রে‌ছেন দারুণ শৈ‌ল্পিক ভাষায়,-
"আমা‌কে দিকজ্ঞানহীন ক‌রে‌ছি‌ল ব্ল‌্যাক লেব‌লের
বোতল থে‌কে পান করা অমৃত।"
এভা‌বে পুরুষই প্রতিরা‌তে মদ হ‌য়ে উ‌ঠে নারীর কামনায়,-
"তোমার সৃজনশীল আঙুল থে‌কে উ‌ঠে আ‌সে
আমার বন‌্যতা, তু‌মি তো মদ প্রতিরা‌তে পান
ক‌রে আসমা‌নে উ‌ড়ি।"
এমন অমৃতপা‌নে অনন্তকা‌লের পিপাষাকাতর ক‌বি নাথস্প‌র্শের অগ্র-পশ্চাৎ উপস্থান ক‌রে লি‌খেন,-
"উফ্ কেমন তোমার আঙুল থে‌কে চিত্রা‌য়িত
দে‌হের তৈল‌চিত্র, কেমন তু‌মি তাবু খাঁ‌টি‌য়ে
কু‌শিকাঁটার মতন এ‌ফোঁড়-ও‌ফোঁড় ক‌রে গত‌রে
ব‌হির্ভা‌গে তৈরী ক‌রেছ নেশায় টলমল আ‌রেক
শরীর, শরী‌রে শরী‌রে গ্রহণ লা‌গি‌য়ে‌ছো,
শরীর‌কে গি‌লে নি‌য়ে‌ছে শরীর। সেইসব মাঝা‌রি
যু‌দ্ধে হে‌রে যাওয়া নেই, ফু‌রি‌য়ে যাওয়া নেই,
প্রতি স্প‌র্শে স্প‌র্শে দু‌লে ও‌ঠে ফস‌লি মাঠ।"
অতপর,
"পঁচাত্তর হাজার প্রজাপ‌তির বাচ্চা উ‌ড়ে গি‌য়ে
ব‌সে‌ছে পা‌র্কের প্রতি‌টি বে‌ঞ্চে।"
কী চমৎকার দৃশ‌্যায়ন। পাঁচ-সা‌তের মারপ‌্যা‌চে মাহবুবা ক‌রিম পাঠক‌কে দাঁড় ক‌রি‌য়ে দেন এক রোম‌ন্টিক চিন্তাসূ‌ত্রের স‌ন্ধিক্ষ‌ণে।
নাথ আ‌সে না, নাথ আ‌সে। নাথ আ‌সে, নাথ হারায়। সুখ-দুঃ‌খের আসা-যাওয়ায় যা‌পিতজীব‌নের নির্মম বাস্তবতায় ক‌বি প‌ড়ে যান বিশ্বাস-অ‌বিশ্বা‌মের সীমাহীন দ্ব‌ন্দ্বে। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে না‌থের প্রস্থান‌কে ক‌বি এ‌ঁকে‌ছেন গণমানু‌ষের ভাষায়,-
"তবুও নারী ও নদীর কা‌ছে এ‌সে মুখ ডু‌বি‌য়ে, সে
আমা‌কে ফে‌লে গেল মুয়া‌জ্জি‌নের প্রতি‌টি ডাক
অগ্রাহ‌্য করা না‌স্তি‌কের ম‌তোই।"
না‌স্তিক-আ‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফে‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে মাহবুবা ক‌রিম নাথ‌কে পে‌য়ে বিশ্বাসী হ‌য়ে উঠ‌তে চান। প্রভুর দয়ার ভিখা‌রি হ‌য়ে বিশ্বাসী হ‌য়ে উঠার মন্ত্র পাঠ ক‌রে লি‌খেন,-
"না‌স্তিক হ‌য়ে‌ছি তো তারই দো‌ষে;/কি‌ঞ্চিত
পে‌লেও গুনগান করা যায়;/তি‌নি যে দয়ালু
স্বীকার করা যায়;/যেত, তোমা‌কে পে‌লে।"
যা‌পিতজীব‌নের নির্মম বাস্তবতায় প‌রের জন‌্য যা কিছু হারাম নি‌জের জন‌্য তা কিছু আরাম। এমন দ্বিচা‌রিতায় প্রভুর প্রতি আ‌ক্ষেপ প্রকাশ ক‌রে‌ লি‌খেন,-
"আমার শরীর‌কে হারাম ক‌রে‌ তু‌লেছ প্রেমের জন‌্য। যেমন ই‌তিপূ‌র্বে প্রেমিক, আমার এই শরীর‌কে হারাম ক‌রে‌ছি‌ল সমস্ত পুরু‌ষের জন‌্য এবং নি‌জে‌কে হালাল ক‌রে‌ছি‌ল আমার শত্রু‌দের কামনায়‌।"
নাথময়প্রেমকাব‌্য "আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফেন" নিঃস‌ন্দে‌হে বাংলা কাব‌্যসা‌হি‌ত্যে এক‌টি অমূল‌্য সং‌যোজন। যেখা‌নে নাথ‌কে‌ন্দ্রিক বিশ্বাস-অ‌বিশ্বাসের আধ‌্যা‌ত্মিক খেলায় দারুণ শব্দবাজী‌তে শিল্পসফল হ‌য়ে উ‌ঠে‌ছে মাহবুবা ক‌রি‌মের গদ‌্যকাব‌্যটি। পু‌রো কাব‌্যগ্রন্থ‌টির আ‌দ্যোপান্ত জু‌ড়ে "আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফেন"‌টি চিরপ্রাস‌ঙ্গিক হ‌য়ে র‌য়েই গে‌ছে শেষ পর্যন্ত। শুভ কামনা মাহবুবা ক‌রিম এবং "আ‌স্তিক-না‌স্তি‌কের মধ‌্যবর্তী হাই‌ফেন"।

আলোচনা : মুহাম্মদ ইয়াকুব



Post a Comment

Previous Post Next Post