প্যাথলজিক্যাল লায়ার: সোয়েব মাহমুদ

 সোয়েব মাহমুদের কবিতা




প্যাথলজিক্যাল লায়ার


আমাদের উঠানে ছন্নছাড়া শকুনের শুশ্রূষা

নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একজন প্যাথলজিকাল লায়ার! 

গণভবনে বসে একজন প্যাথলজিকাল লায়ার

বলছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধান করছে! 

হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে টিক্কা খানের,

অবাক গোয়েবলস নরকের গেটে দাঁড়িয়ে

এত জঘন্য কেউ হয় ভাবছেন!


থাক সেসব কথা,  তারচেয়ে শুনুন

 

গণভবনে বসে কার্ফ্যু ডেকে

তিনদিন ব্যাপি ইন্টারনেট বন্ধ রেখে

মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম রেখে

পোষা চতুর্থ মানের স্ক্রিপ্ট রাইটারদের দিয়ে

চেতনার গল্প লিখিয়ে, শত লাশের উপর দাঁড়িয়ে

বিভাজনের প্লটে সেই একই পূনার্বৃত্তির শ্লোক

কৌতুক সম মিথ্যা লিখিয়ে ফিরলেন, 

ফিরলেন একজন প্যাথলজিকাল লায়ার!

আমাদেরই ভুল

কালো শাড়ি পরিহিত জাম্পকাটের রেকর্ডেড ভিডিও

লাইভ বলে বোকাবাক্সে তিনি যখন উদয় হন

তখন, তখনই বুঝা উচিত ছিল নতুন বেশে

ইয়াহিয়া এসেছেন কসাই টিক্কাকে দিতে পরবর্তী আদেশ, আমরা ধরতে পারিনি।

সারাদিন,  সারটাদিন পরবর্তী দিন সশস্ত্র পেটোয়া

বাহিনীর বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে ছাত্র জনতা,

ফলাফল রক্তে রঞ্জিত সারাদেশের রাজপথ।

স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত নড়ে উঠলো

কেঁপে কেঁপে উঠলো সোনার ফেরাউন বাহিনী!

জনতার ট্যাক্সের টাকায় কেনা বুলেট, বিদ্ধ হলো

জনতার বুকে।

স্কুল কলেজের ছাত্ররা লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়

রক্ত তখন জলপ্রপাতের কাছাকাছি,

জনতার রক্তে মাতাল ধরনী!

নারী হারালো সম্ভ্রম,  মা হারালো সন্তান।

মহররমের দিন তারপরদিন তারপরদিন

প্রতিটি ওয়াক্তের আজান ছিল বিষাদগম্ভীর! 

প্রতিটি মন্দিরের ঘন্টা যেনো বিষন্নতার চাদরে ঘেরা!

থাক, এসব বাদ দিন প্লিজ বাদ দিন

তারচেয়ে শুনুন

ষড়যন্ত্র তত্ত্বে তখনও মশগুল

স্বৈরতন্ত্রের প্রচারমাধ্যম শহীদকে ডাকছে

দুর্বৃত্তকারী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে

স্বৈরতন্ত্রের পোষা নারীবাদী, 

সাহিত্যিক নায়ক গায়ক ব্যবসায়ী কবি

চুষে যাচ্ছে আর বলছে আহ মধু আহ কি স্বাদ

আসুন বসুন আলোচনার টেবিলে,যতই গর্দান

থাকুক তলোয়ারের নীচে, আসুন বসুন, 

আহ কি শান্তি ও মাই মাই আমার হচ্ছে, 

যারা ছাত্রদের পক্ষে কথা বলছে তাদের লিষ্টি করো

ওরা অশান্তি চায় ওহ এবার হবে আমার এইযেএএএ!

বিরক্তিতে দাতে দাত চাপি, সহ্য করি আস্ফালন, দেখি

কি নির্মম কি অসভ্যতা নেমে আসে,

কি আফসোস স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর

কি নিদারুন নির্মমতায় পুনরাবৃত্তি ইতিহাসের!

 

থাক বাদ দিন,  বসুন,  চা খাবেন?

 

লাশ একশ সত্তরটা লাশ! ( ঘৃণাভরে দেখি সরকারি হিসাব)

আমি চুপচাপ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ভীড়ের ভেতর ভীড়ে

দেখছি অশ্রাব্য হাসিতে প্যাথলজিক্যাল লায়ার

যেনো বলে উঠছে কই হলো দ্রুত যারা মারা গেছে

তাদের পরিবারের সাথে হোক ফটোসেশন!

দাম ধরে ফেলো প্রতিটি লাশের! আদেশ শুনে তথ্য

শিক্ষা স্বরাষ্ট্র আর আইন যেনো সেরদরে মাপছেন শহীদের লাশ, ক্ষতবিক্ষত লাশ! 

কার্ফ্যু শরীরে গোটা দেশ হাটছে আর

ঘৃণায় চৌত্রিশ কোটি চোখ,জ্বলজ্বল করে,

থুতুতে ভরে উঠে মাণচিত্রের গলাঅব্দি।

অথচ দাসত্বের কবলে প্রতিটি বোকাবাক্স জানাচ্ছে

উন্নয়ন বাতাবীলেবু চাষ আর পরিস্থিতি স্বাভাবিকের গল্প, 

আচ্ছা কখনও শুনেছেন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে

ভরে উঠে জেলখানা? 

কয়েকদিন পর স্কুল কলেজের রোলকল করতে

শিক্ষকদের যেতে হবে জেলখানায়! 

 

এরপর,

এরপর হয়ত সব থেমে যাবে, মানুষ ভুলে যাবে লাশ, যারা আমাদের লড়াইটা লড়তে গিয়ে শহীদ, ভুলে যাবে। আসবে নতুন ইস্যু, হবে ধরপাকড়! হবে হেনস্তা আবার, আবার হয়ত গর্জে উঠবে রাজপথ! আবার হয়ত গণভবনে বসে একজন প্যাথলজিকাল লায়ার মৃত মানুষের মূল্য নির্ধারণে বলে উঠবেন দেশের মানুষ কবরে ঘুমাচ্ছে, ওদের ডাকবেন না, আবার বোকাবাক্সে উদিত হয়ে প্যাথলজিক্যাল লায়ার আমাদের শেখাবেন দুই যোগ দুই সাত!

বলে উঠবেন আপনারা অযথা শোরগোল

করবেন না, আমার ইগো আঘাতপ্রাপ্ত হয়!

তর্জনী উচিয়ে বলবেন

ভরে ফেলা হবে দেশের সকল জেলখানা!

ভরে ফেলা হবে! দেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি

হয়ে উঠবে আস্ত গোরস্থান! 

হাহ গণভবনের এক প্যাথলজিক্যাল লায়ার!! বলবেন

দেশে উন্নয়ন হচ্ছে,

যার এই কথায় শিয়ালেরা একসাথে ডেকে উঠবে

হুক্কা হুয়ায়ায়ায়া! 


থাক বাদ দিন,  চলুন যাওয়া যাক, সাবধানে পা ফেলবেন গোটা দেশ এক কবরস্থান।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post