সারোক শিকদারের কবিতা

 সারোক শিকদারের কবিতা

 

 


 

                  পুনরুত্থান

 

ওদেরকে ভালোবাসার অনেকেই আছে

আমি নিরন্ন, সর্বস্বহারা, উদবাস্তু- এই দিকে চাও

উপকূল সমগ্র উন্মুক্ত করে আছি,

দুধের বাটি, চাঁদের সর, এসো এই খয়েরী বিলের ভাটে।  

 

অবসর খুব সহজ অংক নয়

তবু কিছু মেলে যদি…, রেখে যেও পায়ের ছাপ

ডানার ভেতর, মনের তুলোয়, যে ফুলের অপেক্ষায়

দিন ঘুমিয়ে পথ হারিয়েছে রাতে তার চ্ছটায়-

 

কোথায় কেঁপে গেছে মাছরাঙ্গা অহেতুক, তবু ঢেউ

এই ঢেউ আর তার হাতছানি ছুঁয়ে দেখছোনা বলে

 অনন্তকাল নোনাজল প্রবাহিত কৃষ্ণপক্ষে,

বুকের ভেতর ডুবে যাচ্ছে চোতেলি ফসলের জাহাজ!

 

পৃথিবীর সমস্ত ফুল কিনে নিচ্ছে গন্ধব্যবসায়ী

সম্ভনাময় কুঁড়িটি আমার-, আমার ডাক নাম বসন্ত

সবুজে কল্লোলে আমাকে কোকিল ভাবতেও পারো

সুরম্য ফুলদানী উপেক্ষা করে আজও আমি প্রকৃত ফুল।

 

যে জীবন প্রাচুর্যের, তোমার অনুকূল ঋতু না পেলে

তাদের সাজানো বাজার মুহূর্ত থমকাবেনা, অস্থিরতার

পারদে ছিঁড়ে যাবেনা কোথাও কোন সুরের বাদ্য

কোথাও কোন পাতার ফাঁকে মরে থাকবেনা অনুভূতির পাখি।

 

এই বনে

অন্তত কাঁটা হয়ে এসো, বিঁধে থাকো হৃদে

লালন করি রক্তের ভেতর যন্ত্রণা - এও তো শূন্য নয়।

মৃতের বিরহে এসে কিটের মত খেয়ে ফেলো আমাকে!

 

উদ্ভ্রান্ত পথ ধূলির মত আমার সহচরে মাছিদের মিছিল

কত তীর কারণ না জেনেই আক্রান্ত করে গেলো

আমাকে পিষে গেলো সুললিত জুতোয় মোড়া কত পা

শুধু মাকড়শার মত নিজেকে আটকানোর জাল বুনে বুনে

নিজের মাংশ পুঁজে আজ ছড়িয়ে আছি কুষ্ঠের অভিশাপ।

 

এক অসমাপ্ত কবরের হাহাকার নিয়ে নিজের গোরস্থানে

অপেক্ষা করি, তোমার মুঠে শেষ মাটিটুকু আমার ইস্তফা

বিস্তৃত শীতলতায় একমুঠ শিউলি ফুল, কখনও ফুটবেনা!


 

 

                     প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের পর 

 

পরাজিত ঘোড়াটির ভঙ্গিতে চুপিসারে দিন চলে যায় 

কৈতরা অস্থির স্বভাবে মেদ ভারী বুকে নুয়ে আসে চাঁদ 

                                      আহ চাঁদ

যেন নির্জন দ্বীপে কারাশোধনাগারের মত এদানিং 

 

 সারা আকাশ কবর সিলিয়েছে কোন এক ক্ষত্রিয় বোন 

নাম ধরে ডাক দিলে তারা নিকটবর্তী হবে এই কালকূলে 

চুমু দেবে থেতলে যাওয়া কলিজায়- দেবে মৃত্যুর আস্কারা 

 

সহস্র সাপ বেরিয়ে আসে উইয়ের ঢিবির ত্যাজ্য জৌলুশ থেকে

তাদের একত্রিত বিষ থলিতে ডোবানো বিজয়ের ভগ্ন মুকুট আজ 

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথাও ফুটে থাকে ত্রিমাত্রিক ফুলের ডায়াগ্রাম 

 

 গভীর রাতে পৃথিবীর ক্ষত নামে কুয়াশার বিচ্ছিন্ন আয়োজন

আস্তাবলের শৃঙ্খলায় চাবুকেরা নদীর মত বিশ্রাম নেয়

                                                                                ভাঙ্গনের মত নাক ডাকে

ঘোড়াগুলো ভুলে যায় কতটা দৌড়ে লেখা হয় মহীনের নাম 

কতটা তীব্র আঘাত রুক্ষ তীক্ষ্ণ মাটির গভীরে পুঁতে দেয় ইতিহাস

 

                                                      তারপর

 কেউ জেগে থাকে বুকের মধ্যে ঘাতকের ছুঁড়ি গেঁথে অবহেলা গেঁথে

যুদ্ধের পোশাকে অলংকৃত হয়ে অসমাপ্ত উড়ালের মত থরথরো

একদিন তাদের দিন শেষ হবে জিতে যাওয়ার মত সুন্দর আবহাওয়ায় 

রক্তক্ষরণ থেমে গিয়ে সেদিন তাদের সবটুকু ক্ষমা হয়ে যাবে 

হয়তো সেদিন সূর্য আরও কিছুক্ষণ দিনের জরায়ুর ভেতর ছড়াবে হ্রেসা 

 সহস্র বছর হাঁটার বাসনা ছেঁড়ে বলবে- থেমেছি এবার

                                                                                                      এখানেই আমার ঘর ।। 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post