আদি শামুকের ক্ষুৎপিপাশা: সুজালো যশ

আদি শামুকের ক্ষুৎপিপাশা: সুজালো যশ



০১.

ফুটন্ত জ্যোৎস্নার ড্রয়ারে ডুবে যাচ্ছে পাখিদের গান,
তবু রোদ্দুরের মত নির্বাণের এককটি পথ ফুটে আছে।
বৃক্ষাশ্রু দেখে পাখির কন্ঠে হাংরি গানের সুর তরঙ্গে উড়ে যায়।
কাঁচের বায়বীয় জলাশয়ে মাছের রক্তযন্ত্র স্পন্দনশীল;
চেতনাহীন চরিত্রে লুব্ধকের আভায় দিব্যদৃষ্টি
মাৎস্যন্যায় নামক গ্রন্থের প্রতিটি পাতা
শীতল তাপে পুড়ছে।
‌অঙ্কুর ভুমিষ্ঠ হওয়ার আগে ‌অবিন্যস্ত পৃথিবীর বুকে স্খলিত হয়ে পড়ে।
অথচ দ্যাখো যে অঙ্কুর ঘোড়ার মত স্বচ্ছ
শীল আকাশে পরিভ্রমণের স্বপ্নে সে বিভোর।

০২.

পাথরের বোতাম খুলে গ্যালে
মাছের চিত্তে শোক কেটে যায়।
পাখিদের আলোচনার সভায় প্রস্ফুটিত হয়ে আছে সূর্যমুখী ফুল।
একুরিয়ামের মাছেরা বাসি খাবার ছাড়া
অন্য কোন কিছু গলাধঃকরণে অভ্যস্ত নয়।
ফলে বীজের আত্মা ক্রমশ গত হয়ে
শীল চ্যুত পারাজিকার মত উবে যাচ্ছে
আর চরিত্রে ছাপাচ্ছে….
যৎ সৎ তৎ ক্ষণিকং
‌তবুও যোনিজংলা বনভূমিতে
হাজারো তৃষ্ণা নিয়ে অনিত্য পৃথিবীতে
অস্থিচূর্ন মাখিয়ে মৃয়মান মুখে ঘুরছে এক মুষ্টি ভাত।

০৩.

রেলগাড়ীর হাত ধরে চিতার স্টেশনে এসে দাঁড়ায় জীবন
আর তার কাঁধে সমস্ত সরল অংকের মতো অলিখিত হিসাব।
দৃশ্যতঃ প্রেম-অদৃশ্য প্রেম
পাওয়া না পাওয়ায় তৃষ্ণার্ত এককটি কথামালা।
‌অথচ এ-সব ভাবতে না ভাবতেই
ঘড়ির কাটা ঢংঢং করে মেয়াদোত্তীর্ণ টিকেটের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

০৪.

বহুকাল ধরে কষ্টিপাথরে শ্যাওলা জমে গেছে
তবুও স্বচ্ছ জলের মাছেরা
চাঁদের আলোর গহ্বরে উড়ে যায় ঘুমের ঘোরে
অভিশাপের হুড়কো খুলে একবার দেখি
পৃথিবীর সমস্ত শরীরে মৃত্যুর আশা নেই
কেবলি সীমাহীন ডানা আর ডানা।

০৫.

ভাষার কশাঘাতে প্রজাপতির শ্বেতকায়
আত্মা উড়ে যায় পাতাহীন গাছের মতোন।
অসুখী গাছেরা সম্পূর্ণ নরকের উৎসব
উপভোগ করতে করতে শক্ত পাথর হয়ে যায়,
ইতিহাসের পাতায় তখন জন্ম নেয় নবীন ঈশ্বর।

০৬.

ঠিকানাহীন আদি শামুকেরা ভুলে গেছে
শিকড়ের নির্যাস নেওয়ার কথা।
বহুকাল ধরে তার ক্ষুৎপিপাসা
বাদামি ফুলের বুকে মাকড়সার মত জমে আছে।
তোমার সমস্ত শরীরে ডুবে যেতে যেতে টের পাই
আমাদের যুগল আত্মারা মিশে যাচ্ছে নীল জ্বলে
আর ক্রমশ অস্তিত্বহীন ফসিলে ধারণ করছে প্রাগৈতিহাসিক পদচিহ্ন।
প্রখর রোদের মত মগজে ছুঁয়ে থাকা
পাগলা ঘোড়ার তীব্র অস্থিরতা নিয়ে
জেগে ওঠে এক নিস্তব্ধ মধ্যরাত।
যে অস্থিরতা ত্রিকালদর্শী গৌতম বুদ্ধকে
নির্বাণের যুগল স্টেশনে দেহহীন আত্মা হয়ে
উড়ে নিয়ে গেছে স্থবিরতার বোধের সাগরে।

০৭.

স্বাদহীন পৃথিবীতে পাখিদের নৈরাশ্যের সুর
বেজে ওঠে ক্রমশ...
ফুলের সুঘ্রাণ অস্ফুট সার্বভৌম বাগানে
শুধু একরাশ ফ্যাকাসে বর্ণের ছায়া।
গোপন বানর গাছ থেকে নেমে আসে
একটুকরো সুস্বাদু মাংসের খোঁজ নিয়ে।

০৮.

পাহাড়জুড়ে ফুটে আছে যক্ষাগ্রস্ত জোৎস্না,
কয়েক'শ বছর ধরে
যেন জলে ডুবে আছে বনচাঁপার করুণ দুর্দশা।
অথচ পরাকীর্ণ স্মৃতি আজও মাছের স্বচ্ছ
ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছে মেঘের মত।

০৯.

যুগল পাহাড়ের বুকে জোৎস্নার জল
ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমস্ত তাণ্ডব।
মৃত বারান্দায় পাগলের হাসি ফুটলে
সুদূর গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে ফুলের সুঘ্রাণ।
পাপাত্মার গলা কাছিম ছানার ডানায়
পরিভ্রমণ করে তির্ষক হৃৎপিণ্ডের মত
কোথাও স্থিরতা নেই
তবুও আজ দেখি বধির পৃথিবী হাসছে পাগলের মত।

১০.

প্রফেটিক প্রণয়ীর পরম যোনি ঝর্ণায়
অস্বস্তি ডুবে গেলে চাঁদের গহ্বরে ওড়ে বিবিধ ফানুস।
আর শাদা কবুতরের ডানায়
মুগ্ধ হয়ে দেখি শান্তির বাগানজুড়ে ফুটেছে সূর্যের ফুল
জগতের সমস্ত প্রাণীর কোলে কোলে..!

Post a Comment

Previous Post Next Post