নিজার কাব্বানীর কবিতা

নিজার কাব্বানীর ‘দামেস্কের বালুঝড়’ থেকে কবিতা

ভাষান্তর: হিমাদ্রী চেীধুরী





বোকা নারীর পত্র


ক.

প্রিয় প্রভু আমার, আমি এক বোকা নারী, এই চিঠি আমার। আপনাকে এর আগে কখনো কি কোন বোকা নারী চিঠি লিখেছিল, লিখেনি? কি ভাবছেনÑ আমার নাম? ছাড়ুন তো, মনে করুন আমার নাম রাঈনা, জায়নাব, হিন্দা বা হাইফা। এই নামই আমাদের জীবনের সবচেয়ে অর্থহীন বিষয়।


খ.

প্রভু, আমি ভয় পাচ্ছি আমার কথাগুলো লিখতে,

আগেও ভয় পেতাম, ভাবতাম আপনার ক্রোধে পুড়ে যেতে পারে সাজানো জান্নাত। আপনার প্রাচ্যদেশে আমাদেও শব্দের আভিজাত্যে বন্ধাত্বের নিরোধ পরানো। শৃঙ্খলিত নারীর বুকের সমস্ত-স্বপ্ন। তার কথা বলাও নিষেধ। এখানে আমাদের আবেগের উপর ঝুলে থাকে ছুরি আর তরবারির দণ্ড। পুরুষের এই বসন্তভূমিতে নারী যেন এক অবিমিশ্র ঋতু। 


গ.

হে প্রভু, রাগবেন না। আমি জানি, আমি লিখতে পারিনা, তবু লিখছি। দরজার ওপাশে আঘাত প্রস্তুত জেনেও লিখছি, ঝড়ের শব্দ নিকট হচ্ছে জেনেও, ঘাতক এগিয়ে জেনেও লিখছি। 


হে প্রভু, আমার দরজার ওপাশে জাহেল যুগের গর্জন। যদি এই চিঠি পড়ে কারো চোখে, যদি চোখে পড়ে এই পোশাকের ঋজুতা- কেটে নেবে মাথা আমার, নির্ঘাত হবো কচুকাটা। 


হে প্রভু, প্রাচ্যের এই রঙ্গশালায় নারী অস্পর্শ্য ভাগাড় আর পুরুষ’ই অধিপতি।


ঘ.

রাগবেন না, হে প্রভু। আমার কথায় রাগবেন না। যদি আমার অভিযোগে খুলে পড়ে সভ্যতার মুখোশ, যদি উন্মুক্ত করে দিই আমার চেতনা, যদি আমি বেড়িয়ে আসি হেরেমের নিয়ম ভেঙে, যদি বিদ্রোহ করি, দখল করে নিই নিপীড়কের ঘর- আপনি রাগবেন না প্রভু।


যদি আমি বিদ্রোহী হই স্বয়ং আপনার বিরুদ্ধে, প্রাচ্যের অন্ধকারের বিরুদ্ধে, যারা নারীকে চেপে রাখতে চায় আড়ালে, আপনি রাগবেন না, আপনি প্রভু, ¶মা করুন সকল গোস্তাকি আমার।


ঙ.

কেবলই কাব্যে আমাদের গেঁথে রেখে যারা সেজে আছে মহান, তাদেরই জরাজীর্ণ রূপকথায় নিংড়ে যায় নারীর জীবন, ‘ভোগে নমস্য নারী তার বাইরে কিচ্ছু নয়’ তেমন সমাজের বিরুদ্ধে যদি বিদ্রোহী হই, গোস্তাকি মাফ করবেন, হে প্রভু। 


প্রভু, আপনি বলুন যা খুশি আপনার। মূর্খ! বোকা! পাগল! যা ইচ্ছে বলুন। যখনই নারী কথা বলেছে, পুরুষ তাকে এড়িয়ে গেছে ‘বোকা’ বলে। চাইলে আপনিও বলতে পারেন প্রভু। ওসবে আর ব্যথা নেই কোন- শুরুতেই তো বলে নিয়েছি আমি বোকা নারী, তাই নয় কী হে প্রভু? 


Post a Comment

Previous Post Next Post